গত ১৪ অগস্ট রাতে মেয়েদের রাতের জমায়েত। ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচমাথার মোড়ে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
১৪ অগস্ট মাঝরাতে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন তৃণমূলের রেওয়াজ। তবে এ বার ওই মাঝরাতেই আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে মেয়েদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচি হয়েছে। আর তাতেই ম্লান তৃণমূলের আয়োজন। প্রত্যাশিত জমায়েত হবে না, এই আশঙ্কায় অনেক জায়গায় মধ্যরাতে কর্মসূচি নেননি তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। যেখানে হয়েছে, সেখানেও ভিড় ছিল পাতলা। অথচ ‘রাত দখলে’ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে উপচে পড়েছে ভিড়।
মেদিনীপুরের এক তৃণমূল পুর-প্রতিনিধি বলছেন, ‘‘এ বার ১৪ অগস্ট মধ্যরাতে স্বাধীনতা দিবস পালনের কর্মসূচি নিইনি। ১৫ অগস্ট সকালে এলাকায় দিনটি পালন করেছি।’’ কেন মধ্যরাতে কর্মসূচি নিলেন না? তাঁর যুক্তি, ‘‘স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি ১৪ অগস্ট মধ্যরাতেই করতে হবে, দলের তরফে এমন নির্দেশ ছিল না। বলা হয়েছিল, স্বাধীনতা দিবস পালন করতে। আমরা ১৫ অগস্ট সকালে করেছি।’’ ওই এলাকার এক তৃণমূল কর্মী মানলেন, ‘‘মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচিতে অনেকেই যাবেন জানতাম। তাই মধ্যরাতে দলীয় কর্মসূচি আমরা চাইনি।’’ তৃণমূলের জেলা কার্যালয়েও মধ্যরাতে কর্মসূচি হয়নি। স্বাধীনতা দিবস পালন হয়েছে ১৫ অগস্ট সকালে।
১৪ অগস্ট রাতে ঘাটাল শহর-সহ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচিতে ছিল উপচানো ভিড়। কোথাওই সেই রাতে তৃণমূলের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান হয়নি। তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশিস হুতাইত জানিয়েছেন, ঘাটালে ওই দিন মধ্যরাতে তৃণমূলের কোনও কর্মসূচি ছিল না। এ বার মধ্যরাতে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়নি গড়বেতার তিনটি ব্লকেও। অন্য বছর ১৪ অগস্ট দলীয় কার্যালয়ে রাত জেগে তৃণমূল কর্মীরা স্বাধীনতা দিবস পালন করতেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতেন। এ বার সে সব হয়নি। তৃণমূলের এক ব্লক সভাপতি বলেন, ‘‘দলের তরফে নির্দেশ কিছু না থাকায় মধ্যরাতের বদলে ১৫ অগস্ট সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন
করা হয়েছে।’’
খড়্গপুরে অবশ্য ১৪ অগস্ট মধ্যরাতেই স্বাধীনতা দিবস পালনের কর্মসূচি করেছে তৃণমূল। মেয়েদের রাত দখলের রাতেই রেলশহরে তৃণমূলের উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবস পালনের অনুষ্ঠান হয়েছে তালবাগিচায়, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে। অবশ্য সেখানে তেমন ভিড় দেখা যায়নি। কয়েকটি চেয়ারও ফাঁকা ছিল।
এই কর্মসূচির উদ্যোক্তা, তৃণমূল নেতা নেতা অসিত পালের দাবি, ‘‘বিগত বছরের তুলনায় এ বার চেয়ারের সংখ্যা বেশি ছিল, এটা বলতে পারি। আর জি করের ঘটনার নিন্দা আমরাও করছি। তবে তা নিয়ে রাজনীতির জায়গা নেই। আমাদের স্বাধীনতা দিবস পালনের কর্মসূচি অন্যবারের মতো এ বারও সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। যথেষ্ট ভিড় হয়েছিল।’’
ঝাড়গ্রামে সর্বত্র ১৫ অগস্ট সকালে স্বাধীনতা দিবস পালন করেছে তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের এক নেতার স্বীকারোক্তি, ‘‘এ বার মহিলাদের রাত দখলের কর্মসূচি থাকায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকালেই স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়েছে।’’ রূপছায়া মোড়ে জেলা তৃণমূলের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু। শহরের ঘোড়াধরা স্টেডিয়াম সংলগ্ন মা-মাটি-মানুষ ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অজিত মাহাতো। দুলাল বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সকালে জেলা থেকে বুথস্তর পর্যন্ত দলের উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবস পালন
করা হয়েছে।’’