ঢাকা পড়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তি। ঝাড়গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
অরণ্যশহরের রাস্তার মোড়ে প্রায় ৯ মাস মুখ ঢাকা অবস্থায় রয়েছেন বর্ণপরিচয়ের স্রষ্টা!
করোনার জেরে শিলান্যাস, উদ্বোধন বন্ধ তো তিনমাস! তা হলে? প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ অনেকেই। তবে আড়ালে আবডালে প্রশাসনের অন্দরের কানাঘুষো—বিদ্যাসাগরের মূর্তির মুখ ঢাকার নেপথ্যে নাকি রয়েছে শাসকদলের অন্দরের সমীকরণ। কাকে দিয়ে মূর্তির আবরণ উন্মোচন হবে তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। সে জট খোলেনি। তাই খোলেনি বিদ্যাসাগরের মূর্তির মুখের ঢাকাও।
বিদ্যাসাগরের দু’শো তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে গত বছর ২৬ অক্টোবর শহরের প্রধান রাস্তায় ওল্ড সেটেলমেন্ট মোড়ে মূর্তিটি বসানো হয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ১৭ ডিসেম্বরে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর ওই মূর্তিটির আনুষ্ঠানিক আবরণ উন্মোচন করার কথা ছিল। কিন্তু মন্ত্রী ওই দিন সময়াভাবে ঝাড়গ্রামে আসতে পারেননি। তাই মূর্তিটির আবরণ উন্মোচিত হয়নি।
কিন্তু মূর্তির উদ্বোধনের সঙ্গে শাসক দলের অন্দরের রাজনীতি কীভাবে জড়িত? লোকসভা ভোটের পরে শুভেন্দুকে তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দুও বিভিন্ন দলীয় ও প্রশাসনিক কর্মসূচিতে জেলায় আসা যাওয়া শুরু করেন। গত বছর ডিসেম্বরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও জেলার সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেন মমতা। তারপর থেকে শুভেন্দু ক্রমশ ঝাড়গ্রাম জেলার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। তবে ব্যক্তিগত সফরে বার কয়েক ঝাড়গ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে ঘুরে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন,‘‘মূর্তিটি উদ্বোধনের জন্য পরিবহণমন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া হয়েছিল। উনি এখনও সময় দেননি। তাই অন্য কাউকে দিয়ে মূর্তিটির আবরণ উন্মোচন করানো যাচ্ছে না।’’
শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে এভাবে মুখ ঢাকা অবস্থায় মাসের পর মাস মূর্তিটি থাকায় অস্বস্তি বাড়ছে প্রশাসনের অন্দরে। সরব হয়েছেন শহরের বিশিষ্টজনেরাও। শহরবাসীর একাংশও বিদ্যাসাগরকে অবমাননা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। চলতি বছরের গোড়ায় বিদ্যাসাগর স্মরণ সমিতির তরফে প্রশাসনিক মহলে লিখিতভাবে বিদ্যাসাগরের বন্ধন-মুক্তির আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি। বিদ্যাসাগর স্মরণ সমিতির ঝাড়গ্রাম জেলা শাখার সম্পাদক অর্চনা বেরা সাঁই বলেন, ‘‘মূর্তিটিকে প্লাস্টিক মুড়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা মূর্তিটির বন্ধন মুক্তির দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু আটমাসেও কিছুই তো হল না। প্রতিদিন বাংলার প্রাতঃস্মরণীয় মণীষীকে অপমান করা হচ্ছে।’’ বিদ্যাসাগরের এমন বন্ধনে বিপন্ন বোধ করছেন শহরের বিশিষ্টজনেরাও। শহরের বাসিন্দা বিশিষ্ট লেখক ও অধ্যাপক ফটিকচাঁদ ঘোষ বলেন, ‘‘মূর্তিটি যেভাবে প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে, সেটা অত্যন্ত দৃষ্টিকটূ। আবরণ উন্মোচনের দিন ঠিক হওয়ার পরে মূর্তিটি বসানো উচিত ছিল। মাসের পর মাস মণীষীকে এভাবে অপমান করাটা ঠিক নয়।’’ এদিকে গত এপ্রিলে কালবৈশাখীর ঝড়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তির উপরের স্টিলের আচ্ছাদনটি উড়ে গিয়েছে।
ঝাড়গ্রামের পুর-প্রশাসক সুবর্ণ রায় বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের অনুমতি পেলে মূর্তিটির আবরণ উন্মোচন করা হবে।’’