প্রতীকী ছবি।
লকডাউনের জন্য পড়ানো এখন বন্ধ। তাই টানা দু’মাস সেভাবে রোজগার ছিল না। আগামী দিনে কীভাবে রোজগার হবে, তার দিশাও পাচ্ছিলেন না। সেই হতাশা থেকেই ঘাটালের মনসুকার কিশোরচকের যুবক পেশায় গৃহশিক্ষক অনুপ মাইতি (৩২) আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে করছে পুলিশ। সোমবার সকালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর পকেট থেকে উদ্ধার হওয়া ‘সুইসাইড নোটে’ও আর্থিক কারণের কথাই উল্লেখ ছিল।
ঘাটাল মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “ওই যুবক আর্থিক কারণেই আত্মহত্যা করেছেন।” ওই যুবকের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতি। তাঁদের আর্জি, সামাজিক দুরত্ব মেনে গৃহশিক্ষকতার অনুমতি দিক সরকার।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ইংরেজিতে স্মাতকোত্তর অনুপ বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে থাকতেন। দীর্ঘদিন ধরেই গৃহশিক্ষকতা করতেন তিনি। স্বপ্ন ছিল স্কুল শিক্ষকতা। তার জন্য পরীক্ষাও দিচ্ছিলেন। গৃহশিক্ষক হিসেবে বেশ নামডাক ছিল তাঁর। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছেলে-মেয়েদের ইংরেজি পড়াতেন তিনি। সব মিলিয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল একশোর বেশি। গৃহশিক্ষকতার টাকাতেই সংসার চালাতেন। মাস ছয়েক আগে বাড়ি লাগোয়া এক ফাঁকা জমিতে পাকা বাড়ি তৈরির কাজে হাত দেন। এই অবধি সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু লকডাউন চালু হওয়ার পরে সবে ওলটপালট হয়ে যায়। পড়ানো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোজগার থমকে যায়। বাড়ি তৈরির কাজও বন্ধ হয়ে যায়। অনুপ মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন।
মৃতের এক পড়শি জানান, বাড়ির কাজ শেষ করতে না পারায় চিন্তায় ছিলেন অনুপ। তবে সম্প্রতি বেশ কিছু বিষয়ে ছাড়ের কথা শুনে ফের মিস্ত্রিদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছিলেন। অনুপের বাবা রামপদ মাইতির আক্ষেপ, “বাড়ির কাজ শেষ হলে বিয়ে করবে বলেছিল ছেলেটা। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল!”
অনুপের বন্ধু তথা গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির ঘাটাল ইউনিটের পক্ষে কাজল ঘোষের আক্ষেপ, ‘‘পড়ানো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ও খুবই ভেঙে পড়েছিল। তবে এভাবে চলে যাবে, ভাবতেও পারিনি।” গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আহ্বায়ক অমর ঘোষ বলেন, “অনুপের মতো অনেক গৃহশিক্ষক হতাশায় ভুগছেন। সরকার বিষয়টির দিকে এখনই নজর দিক।’’
লকডাউনে বিকল্প হিসেবে অনলাইনে পড়াশোনা শুরু হলেও গ্রামে তা সেভাবে দিশা দেখাতে পারেনি, তার প্রমাণ অনুপের অপমৃত্যু। এমনটাই মনে করেছেন শিক্ষামহলের একাংশ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শিক্ষা দফতরের এক আধিকারকের কথায়, ‘‘অনলাইনে পড়াশোনার জন্য যে প্রযুক্তির প্রয়োজন তা গ্রামের অনেক বাড়িতেই নেই। তাই অনলাইনে গৃহশিক্ষকতাও গ্রামে প্রাসঙ্গিক হচ্ছে না। এই বিষয়ে সরকারের দ্রুত নজর দেওয়া উচিত।’’