শিলাবতীর তীরে গনগনির নিসর্গ টানে পর্যটককে। ছবি: জয়দীপ চক্রবর্তী।
প্রকৃতিই এখানে শিল্পী। তার আপন খেয়ালে সেজে উঠেছে শিলাবতী নদীর তীরে গড়বেতার অন্যতম পর্যটনস্থল গনগনি। নিসর্গের নিরিখেই এই এলাকাটিকে ‘বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ বলেন বহু পর্যটক। তারপরেও গনগনির বুকে পর্যটন উপযোগী পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। ফলে, পর্যটন মানচিত্রে ব্রাত্যই থেকে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই মনোরম স্থান।
গড়বেতা শহরটি বেশ উঁচু। পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে শিলাবতী নদী। বর্ষায় ফুলে-ফেঁপে ওঠা নদী গিয়ে আছড়ে পড়ে পাশের উঁচু টিলায়। পাশাপাশি বৃষ্টিতেও ভূমিক্ষয় হয়। সেই ভূমিক্ষয় থেকেই তৈরি হয়েছে ছোট ছোট টিলা, গর্ত, খাল। তাতে আবার রঙের বৈচিত্র্য। কোথাও সাদা, কোথাও লালচে বা ধূসর। কোনও অংশ দেখে আবার মনে হবে যেন মন্দির, আবার কোনও অংশ মনুষ্য আকৃতির, কোথাও বা টিলা গুহার আকার নিয়েছে। ভূগোলের ছাত্রছাত্রী থেকে গবেষক, ভূমিক্ষয় নিয়ে গবেষণার জন্য অনেকেই এখানে আসেন। আর ভ্রমণ-পিপাসু মানুষ আসেন ভূমিক্ষয়ের ফলে তৈরি প্রকৃতির শিল্পকর্ম দেখতে। শিলাবতীর তীরে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের মুহূর্তে গনগনি-র রূপ যে মোহময়ী। গনগনির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লোককথাও। জনশ্রতি, বনবাসে থাকাকালীন ভীমের সঙ্গে বকাসুরের লড়াই হয়েছিল এখানেই।
এ সবের টানেই পর্যটকেরা এখানে আসেন এবং যারপরনাই হতাশ হন। গড়বেতা পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে মাথা তোলা দু’টি, একটি ছাউনি, খানতিনেক সিমেন্টের ছাতা আর উঁচু টিলা থেকে নদীতে নামার জন্য সিঁড়ি— এর বাইরে কিছুই নেই গনগনিতে। নেই রাতে থাকার বন্দোবস্ত। এমনকী পরিস্রুত পানীয় জলও অমিল। শীতকালে পিকনিক করতে অনেকে আসেন। তাই ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এঁটোকাটা, শালপাতায় চারপাশ দূষিত হয়। পরে আর তা সাফাই করার উদ্যোগ চোখে পড়ে না।
গনগনি-র সামগ্রিক উন্নয়নে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের কাছে প্রায় ২ কোটি টাকার পরিকল্পনা বানিয়েছিল জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দও হয়েছে। তবে কাজ শুরু হয়নি। যদিও জেলা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন আধিকারিক সুমন্ত রায়ের আশ্বাস, “আশা করছি, শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। সৌন্দর্যায়ন ও পরিকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন ঘটানো হবে।’’