কারখানার বাইরে বিক্ষোভ শ্রমিকদের। —নিজস্ব চিত্র।
শ্রমিক বিক্ষোভে উত্তাল হলদিয়ার আইপিপিএল কারখানা চত্বর। গ্যাস রিফিলিংয়ের ওই কারখানার শ্রমিকদের অভিযোগ, গত প্রায় দু’বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও সংস্থার বেতন কাঠামোর (সিওডি) পুনর্বিন্যাস হয়নি। তারই প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল থেকে কারখানার কাজ বন্ধ রেখে গেটের বাইরে বিক্ষোভে সামিল হন তাঁরা। যদিও এই বিষয়ে কারখানার তরফে কোনও বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
বিক্ষোভরত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ইন্ডিয়ান অয়েলের ইন্ডেন এলপিজি গ্যাস এবং ভারত গ্যাসের সিলিন্ডার রিফিলিংয়ের কাজ হয় হলদিয়ার আইপিপিএল সংস্থায়। অটোমেটিক মেকানিজ়মে খালি সিলিন্ডার আনলোড থেকে সিলিন্ডার ভর্তি এবং পুনরায় সেগুলো গাড়িতে লোডিং হয় অটোমেটিক কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে। তবে শ্রমিকদের ভূমিকাও এই কাজে যথেষ্ট। এই মুহূর্তে হলদিয়ার প্রায় সমস্ত কারখানাগুলিতেই বেতন কাঠামোর পুনর্মুল্যায়ন হয়ে গেলেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে আইপিপিএল সংস্থায় ‘সিওডি’ করা হচ্ছে না। যার জেরে পরিশ্রমের তুলনায় অনেকটা কম বেতনেই শ্রমিকদের তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
শ্রমিকদের দাবি, মূলত ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে এই কারখানায় কর্মী নিয়োগ হয়। মাথায় থাকে শ্রমিক ইউনিয়ন। অভিযোগ, সেখানে ‘পছন্দের কর্মী’দের বেতন দেওয়া হয় বেশি। বঞ্চিত হচ্ছেন তুলনায় বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন দক্ষ কর্মীরা। বেতন বৈষম্যের পাশাপাশি শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতনের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন তাঁরা। শ্রমিকদের দাবি, কারখানা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় গত দু’বছর ধরে সিওডি চুক্তি হচ্ছে না। ফলে কর্মীদের প্রতিনিয়ত বঞ্চনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এই নিয়ে একাধিক বার শ্রমিকেরা নিজেদের দাবি আদায়ের চেষ্টা চালালেও পুলিশ দিয়ে বিক্ষোভ তুলে দেওয়া হয়। শুক্রবার আবার সরব হয়েছেন শ্রমিকরা।
বিক্ষোভরতদের দাবি, গত ১০ বছর ধরে কাজ করেও এই শ্রমিকদের জন্য কোনও গেটপাশ দেওয়া হয় না। কর্মরত অবস্থায় বা পথে কেউ দুর্ঘটনার কবলে পড়লে তার ক্ষতিপূরণ পাওয়া অনিশ্চিত। শ্রমিকদের বেতন কাঠামো কতটা তা-ও তাদের জানানো হয় না। গত দু’বছর আগে কারখানার সিওডি হলেও নিজেদের বেতন কাঠামো সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রয়েছেন শ্রমিকরা। গোটা ঘটনাটি পরিচালনা করছে কারখানা কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ঠিকাদার সংস্থা এবং শ্রমিক সংগঠনগুলি। এর ফলে কোনও শ্রমিক কত টাকা বেতন এবং অন্যান্য কোন সুযোগ সুবিধার অধিকারী তাঁরা, তা কোনও দিন জানতেই পারছেন না।
ইতিমধ্যে শ্রমিকদের বিক্ষোভে সামাল দিতে চেষ্টার কসুর করছে না কারখানা কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভরতদের বুঝিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন আধিকারিকরা। তবে বিক্ষোভরতদের দাবি, তাঁদের আবেদন অগ্রাহ্য করে বার বার কাজ করানো হয়েছে। এ বার তাঁরা নিজেদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাজে হাত লাগাবেন না।