চোলাইয়ের রমরমা, মণিদহে সরব মহিলারা

যত গোল মদে, ঠেক ভাঙার দাবি

মণিদহের উপপ্রধান অঞ্জন বেরা বলেন, “এ বার মদ, গাঁজা, জুয়ার ঠেকগুলো ভেঙে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ- প্রশাসন। দ্রুতই যাতে ঠেকগুলো ভাঙা হয় তা দেখব।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:২৩
Share:

হেঁসেল: এখানেই তৈরি হয় চোলাই। ছবি: কিংশুক আইচ

সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনির পরে সংসারে অশান্তির মূলে যে মদ সেটা বিলক্ষণ বুঝেছেন নমিতা সিংহ, দুর্গা নায়েকরা। তাই চোলাই মদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন তাঁরা। নমিতা বলছিলেন, “বাড়ির ছেলেরা চোলাই খাবে। রাস্তাঘাটে পড়ে থাকবে। বাড়ি ফিরে বউ-মেয়েকে পেটাবে। এটাই যেন রোজনামচা হয়ে গিয়েছে। এ বার আমরা নিজেরাই চোলাইয়ের ঠেক ভেঙে দেবো। রাস্তা বন্ধ করে দেবো। এ সব করলে তখন উপর থেকে লোক ছুটে আসবে।”

Advertisement

নমিতার ছেলে অপূর্বও নেশাড়ু। সেই নিয়ে ঘরে অশান্তি কম হয় না। স্বামী দেবেন সিংহের পানগুমটি আছে। মেয়ে কলেজে পড়ে। নমিতার কথায়, “এলাকায় অনেক দিন ধরে এই সমস্যা চলছে। আমার ছেলেও মদ খাচ্ছে, জুয়া খেলছে। ছেলেটা লরি চালায়। ঘরে এক টাকাও দেয় না। মেয়েকে মেসে রেখে কলেজে পড়াচ্ছি। না হলে পড়াশোনা হত না। দুর্গার কথায়, “একে সংসারে অভাব। তার উপর প্রতিবাদ করলে স্বামী বা ছেলের হাতে মার খেতে হয় বাড়ির মহিলাদের। পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য চেয়েও মেলে না।’’ যমুনা চালক, নমিতা শীদের কথায়, “উদ্বেগের বিষয় হল, কমবয়সী ছেলেরাও নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে।’’

দুর্গা, নমিতারা তাই শনিবারই গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। মেদিনীপুর গ্রামীণের বেশ কয়েকটি এলাকায় রমরমিয়ে চোলাইয়ের ঠেক চলে। তারমধ্যে এই মণিদহ অন্যতম। কয়েকটি এলাকা যেন চোলাইয়ের আড়ত। যত্রতত্র চোলাই মদের ভাটি। বিভিন্ন জায়গায় মদ মজুত রেখে রমরমিয়ে চলে কারবার। নেশায় বুঁদ বাড়ির পুরুষ থেকে স্কুল পড়ুয়ারাও। এই কারবারের বিরুদ্ধেই সোচ্চার হয়েছেন এলাকার প্রমীলা বাহিনী। পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা না- নিলে নিজেরাই মদের ভাটি ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। প্রমীলা বাহিনীর বক্তব্য, প্রতিদিন মদ খেয়ে এসে স্ত্রীদের মারধর করতে বাড়ির পুরুষরা। পুলিশ- প্রশাসন সব জেনেও চুপ থাকে। তাই নিজেরাই তারা লড়াইয়ে নেমেছে। ছোট- বড় গাছের নীচে উনুন জ্বালিয়ে তৈরি হয় চোলাই। বছরের পর বছর ধরে চলছে এই বেআইনি কারবার। ঠেকের কাছে গেলেই নাকে আসে তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ। শাসক দলের নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে চোলাই কারবারিদের গোপন বোঝাপড়ার রয়েছে বলেও অভিযোগ। অতিরিক্ত মদ খাওয়ার ফলে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে এখানে।

Advertisement

এলাকায় যে চোলাইয়ের ঠেক চলে তা মানছেন মণিদহের তৃণমূল নেতা তথা স্থানীয় উপপ্রধান অঞ্জন বেরা। তাঁর স্বীকারোক্তি, “চোলাই ভাটি রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রামে। কিছু এলাকায় চোলাইয়ের কারবার চলে।’’ কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? উপপ্রধানের জবাব, “কী ভাবে এই কারবার বন্ধ করা যায় দেখছি। প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলেছি। এ বার একে একে ঠেকগুলো ভেঙে দেওয়া হবে।’’ মহিলাদের অবশ্য বক্তব্য, চোলাই কারবারিরা পুলিশ-প্রশাসনকেও ভয় করে না। নমিতার কথায়, “প্রতিবাদ করলে ওরা বলে, যেখানে জানানোর জানা। কে, কী করে দেখে নেবো।’’ এই কারবারের ফলে গ্রামের পরিবেশও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “সারা বছর রুটিন নজরদারি থাকে। নির্দিষ্ট খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযানও হয়।” মণিদহের উপপ্রধান অঞ্জন বেরা বলেন, “এ বার মদ, গাঁজা, জুয়ার ঠেকগুলো ভেঙে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ- প্রশাসন। দ্রুতই যাতে ঠেকগুলো ভাঙা হয় তা দেখব।”

দুর্গারা বলছিলেন, “রোজ অশান্তি আর ভাল লাগে না। ঠেকগুলো ভাঙা না হলে আরও অনেক সংসার শেষ হয়ে যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement