—প্রতীকী চিত্র।
জেলার অর্থনীতির একটা অংশ নির্ভর কৃষিকাজে। তবে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা মহকুমার একটা বড় অংশের বাসিন্দা জড়িত পরচুলা ব্যবসায়। সেই ব্যবসাতেই সম্প্রতি বেআইনি কারবার চালানোর অভিযোগ সামনে এসেছে। বিদেশি ছাত্রকে অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন মহকুমারই এক তৃণমূল নেতা। আপাত দৃষ্টিতে নির্ঝঞ্ঝাট এই ব্যবসায় কালো দিক নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর-১, চণ্ডীপুর এবং চৌখালী এলাকার ৯৫ শতাংশ পরিবার পরচুলা কারবারের সঙ্গে যুক্ত। কেউ কাঁচামাল সংগ্রহ করেন, কেউ সেই গুটি চুলকে পরিষ্কার করেন বা সেগুলি রফতানির কাজে যুক্ত। পটাশপুরের বেশ কিছু এলাকা কারবার ছড়িয়ে গিয়েছে। দৈহিক পরিশ্রম তেমন না থাকায় কম বয়সী ছেলে থেকে বয়স্ক— সকলে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। এলাকার কয়েক হাজার মানুষের রুটিরুজি এই পরচুলা শিল্পেই জড়িয়ে রয়েছে। আর এই ব্যবসার সঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ যোগ রয়েছে চিন-সহ এশিয়ার একাধিক দেশের। যেখানে রফতানি হয় এই পরচুলা।
চুলের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, এখন ভগবানপুর এলাকার পরচুলার কাঁচামাল প্রতি কিলোগ্রাম চার হাজার থেকে চার হাজার দুশো টাকা করে বিক্রি হয়। সেই চুল কারখানা থেকে ‘ফেন্সি’ হয়ে চিনে রফতানি করতে আরও চার হাজার টাকা খরচ করতে হয়। চিনে প্রতি কুইন্ট্যাল পরচুলা বা কাঁচামাল রফতানি করে জেলার ব্যবসায়ীরা গড়ে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা লাভ করেন। আর ‘ফেন্সি’ চুল চিনে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দামে বিক্রি হয়। ওই রফতানি যোগ্য চুল চিনের বাজারে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয় বলেও জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, করোনাকালে লকডাউন পরিস্থিতিতে যোগাযোগ কমে যাওয়ায় তাঁদের ব্যবসায় টান পড়েছিল। লকডাউন পরবর্তী সময়ে ব্যবসার কিছুটা উন্নতি হলেও কূটনৈতিক কারণে চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হয়। ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার কারণে এরপর চিন থেকে তেমন কোনও ব্যবসায়ী পরচুলা কেনার জন্য আসেন না। এমনকী, স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও চিনে যাওয়ার ভিসা পেতে গিয়ে যথেষ্ট সমস্যায় পড়ছেন। কিন্তু চিনের সঙ্গে রফতানি প্রক্রিয়ায় নানা বাধা আসায় বৈধভাবে বাংলাদেশ এবং মায়ানমারে কাঁচামাল পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে চিনে পরে তা রফতানি করা হচ্ছে কখনও কখনও। কিন্তু এই বাংলাদেশে পাঠানোর সময় অনেক ক্ষেত্রে কর ফাঁকি দিতে ‘হাওয়ালা’ চক্রের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে খবর। এর ফলে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরচুলা কারবারি বলেন, ‘‘চিনের মতো বাংলাদেশে পরচুলা রফতানির বানিজ্যিক পরিকাঠামোর সরকারি ভাবে তেমন গড়ে উঠেনি। তাই চোরাপথে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে কাঁচামাল (চুলের গুটি) পাচার হচ্ছে। সেই কাঁচামাল বাংলাদেশ থেকে মায়ানমার রফতানি করেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। একানে ফেন্সি ছাড়াই শুধু কাঁচামাল বাংলাদেশে পাচার করে কুইন্টাল প্রতি দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা পাওয়া যায়।’’
চিনের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ খারাপ এক সময় হয়েছিল, তা মানছেন পরচুলা ব্যবসায়ীদের সংগঠন। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বলে দাবি তাদের। তবে বেআইনি ভাবে পরচুলার কাঁচামাল বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সংগঠন কিছু খোলসা করে মন্তব্য করতে চাইনি। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল হিউম্যান হেয়ার অ্যাসোসিয়েশনে’র রাজ্য সম্পাদক মনোজ সামন্ত বলছেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে চিনে রফতানি বন্ধ থাকায় ব্যবসার ক্ষতি হয়েছিল। এখন অবশ্য চিনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য স্বাভাবিক রয়েছে। সম্প্রতি, রাজ্যে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তুলনামূলক ভাবে চিনের বাজার মন্দা চলছে। আশাকরি পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’’