আইআইটির গেটে প্রতিবাদ। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
দেশের প্রথম সারির প্রযুক্তিশিক্ষা কেন্দ্রগুলিতে কখনও রামদেব বা ‘গুরুদেব’ রবিশঙ্করকে আমন্ত্রণ, কখনও মঞ্চে আরএসএস-এর প্রাক্তন প্রধান মাধব সদাশিবরাও গোলওয়ালকরের ছবি দেওয়া বই রাখা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। খড়্গপুর আইআইটি-ও ২০২১ সালে ভারতের রক্ষণশীল জ্ঞান ব্যবস্থার ক্যালেন্ডার প্রকাশ করে বিতর্কে জড়ায়। এ বছর সেই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশ করা হল ‘বিশ্বগুরু ভারতবর্ষ’ শীর্ষক ক্যালেন্ডার। ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমে’র তরফেই এই ক্যালেন্ডার তৈরি হয়েছে। সেখানে ১৬ জন নোবেলজয়ীর কথা দিয়ে বোঝানো হয়েছে, কী ভাবে ভারত থেকেই জ্ঞানধারা পশ্চিমে গিয়েছে এবং পরে তা পশ্চিম থেকে এ দেশে এসেছে তাদের মোড়ক নিয়ে।
বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, এ সব করে আইআইটির মতো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমন সব তথ্য প্রচার করছে, যা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ বছরের ক্যালেন্ডারে ইউরোপীয় নবজাগরণের মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে বলে সরবও হয়েছে সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটি। যদিও আইআইটির দাবি, ইতিহাসই বলছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস হল ভারত।
‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমে’র চেয়ারম্যান তথা আইআইটির অধ্যাপক জয় সেন বলছেন, “আমরা ইউরোপের নবজাগরণকে অস্বীকার করিনি। কিন্তু হাজার-হাজার বছর ধরে ভারতের সনাতনী চিন্তাধারায় ভর করেই পশ্চিমী সভ্যতার বিকাশ হয়েছে। পরে পশ্চিমের সেই ভাবনাই ফের ভারতের জ্ঞান প্রবাহে আছড়ে পড়েছে। আমরা তথ্যনিষ্ঠভাবে ১৬ জন নোবেলজয়ীর কথা দিয়ে তা ক্যালেন্ডারে তুলে ধরেছি।’’ একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘অথচ কিছু সেকেলে মানুষ বাতিল হওয়া ভাবনাকে আঁকড়ে ধরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।”
নানা মহলের অবশ্য অভিযোগ, কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে যে গৈরিকীকরণের চেষ্টা চলছে, এ সব তারই অঙ্গ। ক’দিন আগে শিবপুর আইআইইএসটি-র মতো কারিগরি এবং বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতিষ্ঠানেও বেদ, পুরাণ বিষয়ক কুইজ় প্রতিযোগিতার মঞ্চে গোলওয়ালকরের ছবি সম্বলিত বই ‘চিন্তাচয়ন’ রাখা নিয়ে বিতর্ক হয়। দু’বছর আগে খড়্গপুর আইআইটি ভারতের রক্ষণশীল জ্ঞান ব্যবস্থার ক্যালেন্ডার প্রকাশ করে বিতর্কে জড়ায়। গত বছরও ‘রিকভারি অব দ্য ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম’ শীর্ষক ক্যালেন্ডারে আর্য আক্রমণকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করা হয়। তার পর গত নভেম্বরে ‘আয়ুর্ধারা’ অনুষ্ঠানে ‘যোগগুরু’ রামদেব ও ‘গুরুদেব’ রবিশঙ্করকে প্রধান অতিথি হিসাবে ডাকায় শোরগোল পড়ে।
সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুণকান্তি নস্করের বক্তব্য, “ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমের নামে প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে নানা গালগল্প ও পুরাণকথাকে বিজ্ঞান বলে বার্ষিক ক্যালেন্ডারে প্রকাশ করা হচ্ছে। ইউরোপের নবজাগরণের মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা হয়েছিল। অথচ এই ক্যালেন্ডারে তা অস্বীকার করা হয়েছে।’’ এই ক্যালেন্ডার বাতিলেরও দাবি জানিয়েছে তারা। এই দাবিতে শনিবার খড়গপুর আইআইটি ক্যাম্পাসের মূল গেটে এক প্রতিবাদ সভা হয়। বক্তব্য রাখেন, অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক তপন দাস, সুরঞ্জন মহাপাত্র, অধ্যাপক মঙ্গল নায়ক প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক সুব্রত দাস, অক্ষয় খান, শুভাশিস শাসমলরা। ব্রেক থ্রু সায়েন্স সোসাইটির তরফেও এই ক্যালেন্ডারের বিরোধিতা করা হয়েছে।