ফর্ম জমা দেওয়ার ভিড়। সোমবার কালেক্টরেটে। নিজস্ব চিত্র
লকডাউন চলছে। তারই মধ্যে জেলা সদরের প্রশাসনিক দফতর কালেক্টরেটে হাজির শতাধিক মানুষ। সকলেই ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পে আবেদন করতে চান। সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করে একসঙ্গে এত লোকের জমায়েত ঘিরে সোমবার কার্যত ধুন্ধুমার হয়েছে মেদিনীপুর কালেক্টরেটে। ভিড় সামলাতে পুলিশ ডাকতে হয়। পুলিশ এসে লাঠি উঁচিয়ে ভিড় ছত্রভঙ্গ করে।
আবেদন করতে আসা লোকজনকে অবশ্য আবেদন না করেই ফিরে যেতে হয়েছে। প্রশাসনের তরফে তাঁদের জানানো হয়েছে, এখনও আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। শীঘ্রই হবে। তখন যেন তাঁরা আবেদন করেন। এ দিন যাঁরা কালেক্টরেটে ভিড় করেছিলেন, তাঁরা মূলত মেদিনীপুর এবং তার আশেপাশের এলাকার বাসিন্দা। কবে থেকে ওই প্রকল্পে আবেদন করা যাবে তা অবশ্য এদিন স্পষ্ট করেনি প্রশাসন। ফলে, আবেদনে ইচ্ছুকদের মধ্যে ধোঁয়াশা বেড়েছে।
কেন কালেক্টরেটে এমন পরিস্থিতি তৈরি হল? চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রণব বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি ফোন ধরেননি। জেলা প্রশাসনের অন্য এক আধিকারিকের সাফাই, ‘‘এখনও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোনও নির্দেশ আসেনি। নির্দেশ এলেই দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’ প্রশাসন সূত্রে খবর, এ দিনই বিকেলে রাজ্য সরকারের তরফে জেলায় নির্দেশিকা পাঠিয়ে জানানো হয়, আপাতত সরাসরি কোনও দফতরে গিয়ে আবেদনপত্র তোলা ও জমা দেওয়া যাবে না। করোনা সতর্কতায় ভিড় এড়াতেই এই পদক্ষেপ। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে প্রচেষ্টা প্রকল্পে আবেদন করা যাবে, সেই নির্দেশ অবশ্য এখনও আসেনি।
লকডাউনের মধ্যে অসংগঠিত শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্প চালু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তৃণমূল সরকার ঘোষণা করেছে, লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত অসংগঠিত শ্রমিকেরা এককালীন এক হাজার টাকা সহায়তা পাবেন। সাধারণত, এ ধরণের সহায়তা প্রকল্পের ক্ষেত্রে ব্লক অফিস, পুরসভায় আবেদন করতে হয় ইচ্ছুকদের। সোমবার যাঁরা কালেক্টরেটে ভিড় করেছিলেন, তাঁদের কোথায় আবেদন করতে হবে তা জানানোও হয়নি। একসঙ্গে অনেকের জমায়েতে প্রশ্নের মুখে পড়ে সামাজিক দূরত্বের বিধি। ভিড়ের মধ্যে থেকে দাবি ওঠে, তাঁরা যখন এসেছেন, তখন আবেদন করেই যাবেন। ক্রমে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় কালেক্টরেট চত্বরে। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। ভিড় হটাতে লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে পুলিশ। এক সময়ে ধস্তাধস্তির পরিস্থিতিও তৈরি হয়। মেদিনীপুরের এক পুলিশ আধিকারিক মানছেন, ‘‘একসঙ্গে অনেকে ভিড় করেছিলেন। ভিড় হঠানো যাচ্ছিল না। তাই ওই পদক্ষেপ করতে হয়।’’
জানা যাচ্ছে, এ দিন কালেক্টরেটের মতো পরিস্থিতির উপক্রম হয়েছে জেলার একাধিক ব্লকেও। জেলার এক ব্লকের বিডিও বলেন, ‘‘অনেকে আবেদন করতে এসেছিলেন। বুঝিয়ে- সুঝিয়ে সকলকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’’ ওই বিডিও বলেন, ‘‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রচেষ্টার ব্যাপারে এখনই কোনও পদক্ষেপ না করতে। সুস্পষ্ট নির্দেশ এলে তখন যে পদক্ষেপ করার করব।’’