কারচুপির অভিযোগ উঠল হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (এইচপিসিএল) হলদিয়া টার্মিনালের বিরুদ্ধে। অভিযোগ এনেছে এইচপিসিএল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন মেদিনীপুর সেলস এরিয়া। ডিলারদের অভিযোগ, পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপি করে ট্যাঙ্কার পিছু ৬০-৮০ লিটার তেল কম দেওয়া হচ্ছে। যাবতীয় নথি সহ অভিযোগ জমাও দিয়েছে ডিলার সংগঠন। শুরু হয়েছে তদম্ত।
ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কল্যাণকুমার মান্না বলেন, ‘‘সম্প্রতি মৌরিগ্রামে সরকার অনুমোদিত পরিমাপক কেন্দ্রে এইচসিপিএলের পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপি ধরা পড়ে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এনেও সুফল পাচ্ছি না। উল্টে সংস্থা থেকে হুমকি ফোন আসছে।’’ এইচপিসিএলের হলদিয়া টার্মিনালের ইন-চার্জ রঞ্জন দস্তিদারের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। আমি মুখপত্রও নই। যা জানার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানুন।” এইচপিসিএলের আধিকারিকদের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে অভিযোগের কথা মেনে রাজ্যের মেট্রোলজি অ্যান্ড মেজারমেন্ট বিভাগের ডেপুটি কন্ট্রোলার পুলক বসু বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। রিপোর্ট এলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে কোথাও কোনও ত্রুটি রয়েছে কিনা।’’
এইচপিসিএলের হলদিয়া টার্মিনাল থেকেই দুই মেদিনীপুরের সব পাম্প ডিজেল ও পেট্রোল নেয়। এখানে দিনে গড়ে একশোরও বেশি ট্যাঙ্কার তেল ভরে। কোনও ট্যাঙ্কারে ১২ কেএল তো কোনও ট্যাঙ্কারে ২০ কেএল তেল আসে। এই টার্মিনাল থেকে তেল দেওয়া হয় সেন্টিমিটারে। ট্যাঙ্কারে কত সেন্টিমিটার তেল ভরলে ১২ বা ২০ কেএল তেল হবে তা নির্দিষ্ট করতে সরকার অনুমোদিত কেন্দ্রও রয়েছে। জল ভরে মাপ ঠিক করে চালানও দেয় তারা। অভিযোগ, এইচপিসিএলের এমন পরিমাপক যন্ত্রেই কারচুপি রয়েছে।
সম্প্রতি কল্যাণবাবু ডব্ল্যুবি ৩৩ বি ৫৪২৬ নম্বরের ট্যাঙ্কারটি মৌরিগ্রামের একটি কেন্দ্রে পরিমাপ করান। তাতে দেখা যায়, প্রথম ট্যাঙ্কে ১৩৫.২ সেন্টিমিটার, দ্বিতীয়টিতে ১৩৫.২ সেন্টিমিটার ও তৃতীয়টিতে ১৩১.৪ সেন্টিমিটার তেল ভরতে হবে। ওই একই ট্যাঙ্কারে এইচসিপিএলের পরিমাপক যন্ত্র অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, প্রথম ট্যাঙ্কে ১৩৪.৮ সেন্টিমিটার, দ্বিতীয় ট্যাঙ্কে ১৩৪.৬ সেন্টিমিটার ও তৃতীয়টিতে ১৩০.৮ সেন্টিমিটার তেল ভরতে হবে। অর্থাৎ তিনটি ট্যাঙ্ক মিলিয়ে ১.৬ সেন্টিমিটার কম। .১ সেন্টিমিটার অর্থাৎ ৬ চাকার ট্যাঙ্কারে প্রায় ৩ লিটার তেল। আর ১০ চাকার অর্থাৎ ২০ কেএল ট্যাঙ্কারে তেলের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫ লিটার।
ডিলারদের সংগঠনের সম্পাদক রোহিতকুমার শর্মার কথায়, “দু’টো পরিমাপ তো ঠিক হতে পারে না। কোনও একটা ঠিক হবে। অথবা দু’টিই ভুল হতে পারে। তাই আমরা সরকারের কাছেও আবেদন জানিয়েছি, বিষয়টি তদন্তের।’’ তারপরই মেট্রোলজি ও মেজারমেন্ট বিভাগ তদন্ত শুরু করেছে। এখন অপেক্ষা শুধু তদন্ত রিপোর্ট হাতে আসার।