ফাইল চিত্র।
দিন সাতেক আগে পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে এসেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের এক বাসিন্দা। উঠেছিলেন ওল্ড দিঘায় থানা সংলগ্ন একটি হোটেলে। হোটেলের ভাড়া নিয়ে ওই ব্যক্তির হয়েছে তিক্ত অভিজ্ঞাতা।
ওই পর্যটক জানাচ্ছেন, এসি ছাড়া এক কামরা এবং শৌচালয় বিশিষ্ট ঘরের জন্য তাঁকে গুনতে হয়েছে হাজার টাকা। তাঁর দাবি, অথচ কিছুদিন আগে ওই হেটেলেই একই ঘরের জন্য তাঁর এক পরিচিত দিয়েছেন মাত্র ৮০০ টাকা। তাঁর কথায়, ‘‘স্থানীয়েরাও আমাদের বলেছেন, অফ সিজনে ওই ঘরের দাম মেরেকেটে ৫০০ টাকা নেওয়া হয়।’’
দিঘায় হোটেলের ভাড়ার ওঠাপড়া নিয়ে হামেশাই এমন অভিযোগ শোনা যায় পর্যটকদের মুখে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে এসে দিঘায় হোটেলের যথেচ্ছ ভাড়া নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। তিনি জেলা প্রশাসনকে এ নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জেলা থেকে ফেরার পরেই ভাড়া নিয়ে ওই অভিজ্ঞতা হয়েছে অশোকনগরের ওই পর্যটকদের।
পর্যটকদের একাংশের অভিযোগ, সপ্তাহের শুরু এবং মাঝামাঝি সময়ে হোটেলের ভাড়া স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য বেশি থাকে। তবে সপ্তাহান্তে শনি এবং রবিবার হোটেলের ভাড়া যেন আকাশ ছোঁয়া হয়ে যায়। উত্তর ২৪ পরগনার ঈশ্বরীগাছা থেকে আসা এক পর্যটকের কটাক্ষ, ‘‘আরে হোটেল ভাড়া কি টিআরপি না কি! এই উঠছে তো এই পড়ছে।’’
একাংশ পর্যটক কিছু হোটেলের পরিষেবা নিয়েও প্রশ্ন করেছেন। হুগলির চুঁচুড়া থেকে এসেছিলেন প্রিয়ঙ্কা শর্মা। তাঁর কথায়, ‘‘নিউ দিঘার বাইপাসের অদূরে একটি হোটেলে ছিলাম। বাথরুমে ন্যূনতম জল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। পর্যটকদের সুবিধা অসুবিধা দেখার জন্য অবিলম্বে প্রশাসনের তরফে প্রতিটি হোটেলে সারপ্রাইজ ভিজিট হওয়া উচিত।’’
দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ (ডিএসডিএ) এবং রামনগর-১ ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, কয়েকদিন আগেই দিঘার সমস্ত হোটেল ব্যবসায়ীকে নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে ব্যবসায়ীদের ঘর ভাড়া এবং পরিষেবা নিয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। ভাড়ার তালিকাও পর্ষদের দফতরে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশ দেওয়ার পরও বাড়তি ভাড়া আদায় হচ্ছে বলে এখনও অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে দিঘা-শঙ্করপুর হোটেল মালিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হোটেলের ভাড়া নিয়ে পর্যটকেরা মাঝেমধ্যে অভিযোগ জানান। তখন আমরা ওইসব হোটেল মালিককে ডেকে উভয় পক্ষের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করি। পরিষেবা নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে আমাদের অফিসে জানাতে পারেন।’’
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও কড়া হচ্ছে না কে প্রশাসন? এ ব্যাপারে ডিএসডিএ সূত্রের খবর, হোটেল মালিকদের ঘরের ভাড়ার তালিকা বানিয়ে হোটেলের সামনে লাগানো এবং প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যাঁরা নিয়ম মেনে চলবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মত দিঘার হোটেল ভাড়া নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী দিনে ওই টাস্কফোর্স প্রতিটি হোটেলের ওপর নজরদারি চালাবে।’’
শুধু হোটেল ভাড়া নয়, সৈকত শহরে অটো-টোটো ভাড়া, যানজট এবং রাতের বাস পরিষেবা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পর্যটকেরা। উল্লখ্য, গত কয়েক মাস ধরে দিঘায় বাইপাস সংস্কারের কাজ চলছে। এর ফলে শহরের ভেতর দিয়েই দিঘায় বড় ও ছোট যানবাহনগুলি যাতায়াত করে। এতে কিছুটা হলেও যানজট হচ্ছে বলে দাবি। টোটোর ভাড়া নিয়ে অনেকেরই অভিযোগ, উদয়পুর থেকে নিউ দিঘা বা ওল্ড দিঘা, মোহনা যাওয়ার জন্য টোটো এবং মেশিন চালিত ইঞ্জিন রিকশা ইচ্ছেমত ভাড়া নেয়। চালকেরা নির্দিষ্ট কোনও ভাড়ার তালিকা মেনে চলেন না।
নিউ দিঘার তৃণমূল সমর্থিত পরিবহণ সংগঠনের নেতা শৌভিক দত্ত এ নিয়ে বলেন, ‘‘নিউ দিঘায় আটটি রিকশা স্ট্যান্ড রয়েছে। সেখানে ভাড়া তালিকা ঝোলানো থাকে। তা সত্ত্বেও পর্যটকদের কাছ থেকে টোটো এবং অটোর ভাড়া নিয়ে বেনিয়মের অভিযোগ পেয়ে থাকি।’’ এ প্রসঙ্গে রামনগর-১ ব্লকের বিডিও আশিসকুমার রায় বলেন, ‘‘দিঘায় বেশ কিছুদিন ধরে রেজিস্ট্রেশন ছড়া বহু টোটো এবং অটো চলাচল করছে। মূলত এরাই পর্যটকদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে ঝামেলা পাকাচ্ছে। এ ধরনের গাড়িগুলি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবহণ দফতর ও পুলিশকে বলা হয়েছে।’’
দিঘায় সন্ধ্যার পর হাওড়াগামী এক্সপ্রেস ট্রেন চলে যাওয়ার পর দুই মেদিনীপুর বা কলকাতা যাওয়ার জন্য তেমন বাস থাকে বলে পর্যটকদের অভিযোগ। এ ব্যাপারে ডিএসডিএ’র চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার সুজনকুমার দত্ত বলেন, ‘‘অধিকাংশ পর্যটক কলকাতা এবং শহরতলীর। তাঁরা যাতে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরতে গিয়ে অসুবিধেয় না পড়েন, সে রকম সময়সূচি মেনেই বাস চলে। আগামী দিনে বাসের সংখ্যা বাড়ানো যায় কি না, সে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখব।’’