সিপিএমের ঘাটাল জোনাল কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ঘরছাড়া দলীয় কর্মীরা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
ভোট মিটলেও সন্ত্রাসের অভিযোগ অব্যাহত। কোথাও ফতোয়া উপেক্ষা করে জোটের মিছিলে যাওয়ার মারধর-বয়কট, আবার কোথাও জোটের প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট হওয়ায় হুমকি দেওয়ার অভিয়োগ উঠছেই। অভিযোগের তির শাসকদলের দিকে।
গত সোমবার ভোট মিটতেই তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে ঘাটালের বিভিন্ন এলাকার অনেক সিপিএম কর্মী-সমর্থক ঘর ছাড়েন বলে অভিযোগ। সিপিএমের অভিযোগ, ঘরছাড়দের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে এখনও পর্যন্ত ১৫ জন মহিলা-সহ প্রায় ৫৪ জন সিপিএমের কর্মী ঘর ছেড়েছেন। তাঁরা এখন রয়েছেন দলের ঘাটাল জোনাল কার্যালয়ে। ঘরছাড়াদের তালিকা তৈরি করে পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। যদিও পুলিশ নীরব দর্শক। ঘরছাড়াদের ফেরাতে পুলিশ কোনও পদক্ষেপই করছে না বলে অভিযোগ।
সিপিএমের ঘাটাল জোনাল কমিটির সম্পাদক উত্তম মণ্ডলের অভিযোগ, “পুলিশ কাযর্ত নীরব দর্শক। ঘাটাল থানার বিভিন্ন এলাকায় দলের কর্মীদের মারধর, কার্যালয় ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটছে। বহু কর্মীও ঘরছাড়া। সব ঘটনার কথা পুলিশকে জানানো হয়েছে। যদিও কাজ কিছুই হয়নি।’’ যদিও ঘাটালের বিডিও সঞ্জয় পণ্ডিতের দাবি, ‘‘দ্রুত ঘরছাড়াদের ফেরাতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ ঘাটাল থানার পুলিশ সূত্রেও খবর, ঘরছাড়াদের ফেরাতে সবর্দলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যেই তাঁদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে।
বিরোধীদের অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ শাসকদল। তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক সাধারণ সম্পাদক বিকাশ করের দাবি, “মিথ্যে অভিযোগ। দলের সন্ত্রাসের কারণে কেউ ঘড়ছাড়া হয়নি। এটা তৃণমূলের সংস্কৃতি নয়।’’ যদিও পরক্ষণেই তিনি বলছেন, ‘‘আমরাও এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। যদি কেউ দলের চাপে ঘরছাড়া হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁরা ঘরে ফিরতেই পারেন।”
সিপিএম সূত্রে খবর, ভোটের দিন থেকেই ঘাটালের শিমুলিয়া, গঙ্গাপ্রসাদ, দৌলতচক, মেটালা, বনহরিসিংহপুর, রাধানগর, মনসুকা, মাধবচক-সহ বিভিন্ন এলাকায় অশান্তি অব্যাহত। সিপিএমের লোকাল কমিটির অফিসে ভাঙচুর, কর্মীদের বাড়িতে হামলা, খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া, ধান কাটতে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। অভিযোগ, তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে ৬ জন মহিলা-সহ ২১ জন আহত। আহতদের মধ্যে ছ’জন ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি।
অভিযোগ, সন্ত্রাসের জেরে গত দু’দিনে হুগলি জেলা লাগোয়া গঙ্গাপ্রসাদ গ্রাম থেকেই প্রায় ৩০ জন দলীয় সমর্থক ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়াও রাধানগর, মাধবচক, বনহরিসিংহপুর গ্রাম থেকেও আরও প্রায় ২৪ জনের মতো ঘর ছেড়েছেন। তাঁদের বর্তমান আশ্রয় ঘাটাল শহরে দলের জোনাল অফিসে। দলের বহু কর্মী বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে অন্যত্রও চলে গিয়েছেন।
ঘরছাড়া গঙ্গাপ্রসাদ গ্রামের বিশ্বনাথ দোলই, নারায়ণ সাতিক, দৌলতচক গ্রামের অসিত সাতিক, বনহরিসিংহপুরের ভোলানাথ করদের অভিযোগ, “ভোটের দিন থেকেই দলের কর্মীদের মারধর চলছেই। মদ্যপ অবস্থায় তৃণমূলের লোকেরা বাড়িতে ঢুকে মেয়েদের উপরও অত্যাচার চালাচ্ছিল। দলের নেতাদের ঘটনার কথা জানাই।’’ তাঁদের অভিযোগ, ‘‘গ্রামে পুলিশ এসেছিল। যদিও পুলিশ চলে যাওয়ার পর আবার একই ভাবে অত্যাচার শুরু হয়। গ্রামে থাকলে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। তাই বাধ্য হয়ে রাতেই ঘর ছেড়ে ঘাটালে চলে আসি।’’
এখন ধান কাটার সময়। অনেকে মাঠে সব্জি-পাটও চাষ করেছেন। ঘরছাড়াদের আশঙ্কা, শাসকদলের কর্মীরা তাঁদের চাষ করা ফসলও নষ্ট করে দিতে পারে। তাঁদের আর্জি, ‘‘প্রশাসন তাঁদের দ্রুত ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করুক।’’ এক ঘরছাড়া কর্মীর কথায়, ‘‘এখন ধান কাটা চলছে ।বহুদিন সব্জি খেতে সেচও দেওয়া হয়নি। মাঠ থেকে ধান না তুলতে পারলে খাব কী?”