একমঞ্চে শুভেন্দু ও হিরণ। নেতাইয়ে। নিজস্ব চিত্র
তাঁর দলবদলের সম্ভাবনা নিয়ে বিতর্ক মেটেনি। এই আবহেই ঝাড়গ্রামের নেতাইয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পাশে হাঁটলেন খড়্গপুরের বিজেপি বিধায়ক অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শুভেন্দুর পাশে থেকে যাবতীয় বিতর্কে জল ঢেলে হিরণ বোঝাতে চাইলেন, তিনি বিজেপিতেই আছেন। আবার শুভেন্দুও বার্তা দিলেন, তাঁর পরিষদীয় দল নতুন করে ভাঙছে না।
সোমবার বিকেলে লালগড় থেকে পদযাত্রা করে নেতাই গ্রামে পৌঁছে শহিদবেদি স্থলে সভা করেন শুভেন্দু। আগাগোড়া শুভেন্দুর সঙ্গেই ছিলেন হিরণ। বিজেপির পতাকা কাঁধে শুভেন্দুর পাশেই মিছিলে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে হিরণের পরনেও ছিল গেরুয়া পোশাক। মুখে শুভেন্দু স্তুতি। হিরণ বলেন, ‘‘৭ জানুয়ারি নেতাইয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দিনে কাউকে দেখা যায়নি। দেখা গিয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীকে, যিনি সঙ্গে সঙ্গে চলে এসেছিলেন। মৃতদের তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের সৎকার করেছিলেন। সেই শুভেন্দু অধিকারী নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে এই বেদি তৈরি করেছিলেন। ২০২২ সালে দাদা আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এখানকার পুলিশ ঢুকতে দেয়নি। শেষমেশ আপনাদের আশীর্বাদ, সহযোগিতায়, ভালবাসায় হাজার হাজার মানুষ দাদাকে নিয়ে এসেছেন।’’
দলবদল বিতর্ক ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতির সঙ্গে তাঁর ছবি ‘ভাইরাল’ হওয়ার পরেই কড়া প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করেছেন হিরণ। বিভিন্ন ভাবে, বার বার বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে তিনি বিজেপিতেই আছেন। শনিবারই অভিনেতা-সাংসদ দেবকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন। টেনেছিলেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকেও। যিনি এখন তাঁর দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাও বটে। রবিবার দেবের সাংসদ এলাকার অন্তর্গত দাসপুরে একটি অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে গিয়েও নানা বিষয়ে সরব হন তিনি। সেখানে নতুন করে দেবের নাম মুখে আনেননি বটে তবে বাংলা সিনেমার প্রযোজকদের (প্রোডিউসার) বিরুদ্ধে দলবাজির অভিযোগ করেছেন। যা শুনে অজিত মাইতি দাবি করলেন, হিরণ এখন ভদ্রতার সীমা লঙ্ঘন করছে। খড়্গপুরের বিধায়ক নাকি তৃণমূলে আসার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন! সফল না হয়ে এখন এইসব কথা বলছেন।
দাসপুরের ওই অনুষ্ঠানের একটি ভিডিয়োয় (আনন্দবাজার তার সত্যতা যাচাই করেনি) হিরণকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘যেদিন আমি ভোটে জিতেছিলাম, সেদিন আমাকে ফোন করে বলা হল হিরণ তুই ভোটে জিতেছিস, খুব খুশি। কিন্তু বুঝতে পারছিস তো আমাকে করে খেতে হবে। বাংলা সিনেমা করে রিলিজ করব কী করে, যদি তৃণমূলের সাহায্য না পাই। ওরা বলে দিয়েছে, তোকে নিলে সিনেমা রিলিজ করতে দেওয়া হবে না।” বাংলা সিনেমার প্রযোজকেরা সবাই তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেন হিরণ। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘বাংলা সিনেমার সবথেকে নাম করা প্রযোজক, যিনি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন, তিনি কী কারণে জেলে গিয়েছেন তার কারণ সারা পশ্চিমবঙ্গ জানে। আরেকজন বড় প্রয়োজক মুখ্যমন্ত্রীর নমিনেশনে গিয়ে পাশে বসে সই করছেন। ফলে তাঁদের কি শিরদাঁড়া সোজা আছে!’’ অজিতের সঙ্গে তাঁর যে ছবি ‘ভাইরাল’ হয়েছে তাকে ফের একবার সাজানো বলেও দাবি করেছেন তিনি। দাসপুরে বলেছেন, ‘‘ওরা (তৃণমূল) আমার ছবি নিয়ে রাজনীতি করছে। এরপরই ভিডিয়ো নিয়ে আসবে, আরও অনেক কিছু নিয়ে আসবে।”
অজিতের পাল্টা দাবি, ‘‘তৃণমূলে যোগ দিতে একাধিকবার অভিষেকের সঙ্গে দেখা করেছেন হিরণ। দল বদলানোর জন্য উনি (হিরণ) এতটাই মরিয়া ছিলেন যে, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন।’’ তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘অভিষেকের অফিসের সমস্ত কথোপকথন প্রকাশ্যে নিয়ে আসব।’’