মৈতনার জগন্নাথ বিগ্রহ। নিজস্ব চিত্র
ইদের আগের দিন রথ। তাই এ বার একটু বেশিই উৎসব মুখর মৈতনার ডেমুরিয়া। বছরের পর বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির নিদর্শন বয়ে চলেছে ‘মিতনার রথ’। স্থানীয় মানুষের কাছে এই নামেই পরিচিত রামনগর-২ ব্লকের মৈতনা পঞ্চায়েতের রথযাত্রা।
স্থানীয়দের দাবি প্রায় তিনশো বছরের পুরনো এই রথে বরাবরই যোগ দেন মুসলিমরাও। এমনকী শুধু তাঁদের উদ্যোগেই রথযাত্রার পর দশদিন ধরে চলে মেলা। ডেমুরিয়ার রথযাত্রা কমিটিতেও রয়েছেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। এ বারের পরিচালন কমিটি-র সভাপতি হয়েছেন রামনগর-২ বিডিও প্রীতম সাহা। সম্পাদক অলক চৌধুরী এবং মৈতনা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তমালতরু দাসমহাপাত্র। সহ-সম্পাদk ওয়াসিম রহমান।
ওয়াসিম রহমানই জানালেন, প্রায় দুশো বছর ধরে মেলা পরিচালনা করছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। একসময় ডেমুরিয়ার জগন্নাথ মন্দিরের সম্পত্তি ছিল বিশাল কাজু বাদামের জঙ্গল। সেই জঙ্গল দেখাশোনা করতেন মুসলিম প্রজারা। পরিবর্তে এই রথের সময় তাঁদের টাকাপয়সা দেওয়া হত। তখন থেকেই তারা মেলা বসাচ্ছেন রথের সময়। আজও সে নিয়ম ভাঙেনি।
জনশ্রুতি বলে, প্রায় ৩০০ বছর আগে এই অঞ্চলে জগন্নাথদেবের পুজো শুরু করেছিলেন মোঘনি নারায়ণ চৌধুরী। তিনি ওডিশার ব্রাহ্মণ। প্রতি বছর লোকজন নিয়ে রথের সময় পুরী যেতেন। একবার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে বারই জগন্নাথের আদেশে ডেমুরিয়ায় ফিরে জগন্নাথ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্গীরা আক্রমণের ভয়ে তিনি জগন্নাথ মূর্তি করুণাকরণ পাহাড়ির বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে শোনা যায়। এখনও পাহাড়ি-বাড়িতেই জগন্নাথদেব থাকেন। তবে ভোগ রান্নার অধিকার মোঘনি নারায়ণ চৌধুরীর বংশধরদের।
পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান তমালতরু দাসমহাপাত্র বলেন, ‘‘এখানে মুসলিমদের রথ টানাতে কোনও বাধা নেই। তবে সুভদ্রার রথ টানতে পারেন শুধু মহিলারাই। পুরীর মতো এখানেও তিন রথের নাম তালধ্বজ, দর্পদলন এবং নন্দীঘোষ।’’ রথের দিন ডেমুরিয়া থেকে বালিপুখুড়িয়া আসেন তিন ভাইবোন। সেখানেই মূল মেলা হয় দশ দিন ধরে। তারপর দেবতারা চলে যান মহম্মদপুরের গুন্ডিচা মন্দিরে। এ বছর রোজা রেখেই রথের কাজ করছেন ওয়াসিম রহমানরা। তিনি বলেন, ‘‘এতে তো কোনও অসুবিধা নেই। গত বছরও এমন হয়েছিল। তাতে আনন্দ একটু বেশিই।’’