—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিকেও ভাল ফল করেছে জেলার ছাত্রছাত্রীরা। বুধবার ফল বেরোনোর পরে দেখা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের চার পড়ুয়ার নাম রয়েছে মেধা তালিকায়। যাঁদের মধ্যে দুই কৃতী তো নিজের মাধ্যমিকের সময়েও মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন। এই কৃতীদের কেউ কেউ বলছেন ‘নিট’ পরীক্ষার মতোই রাজ্যের সরকারি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষাতেও স্বচ্ছতা আনা দরকার।
এ বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জেলার অন্যতম কৃতী সায়ন্তন মাইতি। রাজ্যে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন তিনি। কাঁথি হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। দু'বছর আগে মাধ্যমিকেও সায়ন্তন রাজ্যে সপ্তম হয়েছিলেন। পরপর এই সাফল্যের জন্য বাবা-মায়ের পাশাপাশি, স্কুলের শিক্ষকদের কাছে সায়ন্তন ঋণী বলে জানিয়েছেন। তাঁর বাবা বাণীব্রত এবং মা সীতা— দু’জনেই স্কুল শিক্ষক। তবে পেশা হিসাবে শিক্ষকতা পছন্দ করেন না সায়ন্তন। কারণ হিসেবে বলছেন, ‘‘রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিয়মিত হয় না। এর ফলে অধ্যাপক বা শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর চোখের সামনে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে যা পরিস্থিতি দেখছি, তাতে শিক্ষকতা সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়েছি।’’
দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে হলদিয়া হাইস্কুলের সংসপ্তক আদক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় দশম স্থান (৪৮৭) অধিকার করেছেন। হলদিয়ার দুর্গাচকে এক কামরার ভাড়া বাড়িতে থাকেন তাঁরা। বাবা দুর্গাপদ বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। টিউশন, বইয়ের খরচ এসেছিল তাঁর একাধিক স্কলারশিপের টাকা থেকে। রসায়ন নিয়ে গবেষণা করতে চান সংসপ্তক। স্কুলের শিক্ষক এবং প্রাইভেট শিক্ষকদের পাশাপাশি, ইউটিউবে-ও ‘ফ্রি কোচিং’ মন দিয়ে শুনতেন। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে আদালতের রায় এবং আন্দোলন নিয়ে প্রতিটি খবর নজরে রয়েছে তাঁর। বলেন, ‘‘শিক্ষকেরা হলেন সমাজের মেরুদণ্ড। তাঁদের আরও বেশি মর্যাদা প্রাপ্য।’’
এগরা ঝাটুলাল হাইস্কুলের কলা বিভাগের ছাত্রী দেবপ্রিয়া বরও দশম (৪৮৭) হয়েছেন। এগরার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দলঅলুয়ার বাসিন্দা দেবপ্রিয়ার বাবা বাসুদেব বর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক এবং মা পূর্নিমা বর স্বাস্থ্য কর্মী। আগামী দিনে সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করতে চান দেবপ্রিয়া। পরীক্ষার সময় রুটিন মেনে পড়ায় সাফল্য এসেছে বলে দাবি করেন। ভবিষ্যতে গবেষণা করতে চান দেবপ্রিয়া। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁকে যথেষ্ট কষ্ট দিয়েছে। ভবিষ্যতে যোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ করা হোক, চান তিনি।
হলদিয়ার অনীশ ঘোড়ইও দশম হয়েছেন। হলদিয়া গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড বিবেকানন্দ বিদ্যাভবন স্কুলের এই ছাত্রটি মাধ্যমিকেও অষ্টম স্থান পান। সে সময় তিনি বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম শিক্ষায়তন পড়তেন। বাবা অরূপ কুমার ঘোড়ইয়ের সুতাহাটায় ইলেকট্রিকের দোকান রয়েছে। কিসমত শিবরামনগরের বাসিন্দা অনীশ ‘নিট’ এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এন্ট্রান্সে ভাল ফল করবেন বলে প্রত্যয়ী। অনীশও চান যোগ্য শিক্ষকেরা যেন চাকরি ফিরে পান।