নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে নকল হামলা উপকূল এলাকায়। — নিজস্ব চিত্র।
ঠিক যেন সিনেমার দৃশ্য!
নিরাপত্তার বলয়ে ছিদ্র খুঁজে ঢুকে পড়ছে জঙ্গিরা। তা টের পেয়েই পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী। কখনও তা হচ্ছে হলদি নদীতে, কখনও বা গঙ্গায়, কখনও আবার সাগরে! বৃহস্পতি ও শুক্রবার এমন দৃশ্যই বারবার চোখে পড়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকায়।
তবে সব ক’টি ঘটনাই সিনেমার মতো। আগেভাগে সাজানো। পোশাকি ভাষায় যার নাম ‘হামলা-২০১৬’। উপকূলরক্ষী বাহিনীর কলকাতা আঞ্চলিক দফতরের মুখপাত্র ডেপুটি কম্যান্ডান্ট অভিনন্দন মিত্র বলছেন, ২০০৮ সালে ২৬ নভেম্বর সাগর পথে মুম্বইয়ে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল আজমল কাসভ ও তার দলবল। তার পর থেকেই দেশের উপকূলীয় নিরাপত্তা বাড়ানোয় জোর দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তার অঙ্গ হিসেবেই তৈরি হয়েছে ‘হামলা’ নামে এই মহড়া। উপকূলীয় এলাকা এবং সেই এলাকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কতটা জোরদার তা খতিয়ে দেখতেই বছরে দু’বার এই মহড়া চালানো হয়। উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে আলোচনা করে এই মহড়া ঠিক করা হয়। ‘নোডাল এজেন্সি’ হিসেবে পুরো পরিকল্পনা করেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর অফিসারেরাই। সেই গোপন পরিকল্পনার কথা জানতে পারেন উপকূলরক্ষী বাহিনী, রাজ্য সরকার ও পুলিশের গুটিকয়েক শীর্ষ পদাধিকারী। ‘‘মহড়ার কথা আগেভাগে বলে দিলে নিরাপত্তা ব্যবস্থার খামতিগুলি সে ভাবে ধরা পড়ে না। সেই কারণেই এত গোপনীয়তা রাখা হয়,’’ বলছেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক কর্তা। প্রসঙ্গত, অনেক ক্ষেত্রেই আচমকা জঙ্গিহানা বা নিরাপত্তার বেড়াজাল টপকে লোক ঢুকে পড়ার ঘটনা নিয়ে পুলিশের অন্দরে উত্তেজনাও তৈরি হয়। কিন্তু এটাও মহড়ার অঙ্গ বলে দাবি করে ওই অফিসারের বক্তব্য, এই বিপদবার্তা ঠিক মতো কন্ট্রোল রুমে যাচ্ছে কি না এবং তার ভিত্তিতে কত দ্রুত প্রতিরোধ গড়া হচ্ছে, সেটা বুঝে নেওয়া যায়। উপকূলরক্ষী বাহিনী ও পুলিশ সূত্রের খবর, এই মহড়ায় দক্ষিণ পরগনা জেলা পুলিশ, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ, সিআইএসএফ যোগ দিয়েছিল। এমনকী বাদ যাননি হলদিয়া টাউনশিপ ফাঁড়ির পুলিশকর্মীরা। গত দু’দিন ধরে হলদিয়া বন্দর, সাগরদ্বীপ, বজবজ-সহ একাধিক জায়গায় ওই হামলার মহড়া হয়েছে।
কী কী ধরা পড়েছে এই মহড়ায়? উপকূলরক্ষী বাহিনীর মুখপাত্র জানান, মহড়ায় ঠিক কী কী মিলেছে তা নিরাপত্তার খাতিরেই প্রকাশ্যে আনা যায় না। তবে সব ক’টি জায়গাতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোটের উপর ভাল। তবে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটোসাঁটো করার কথা ভাবা হচ্ছে।