এই পরিখা সংস্কার করতে গিয়েই ধস নামে। ইনসেেট ক্ষতিগ্রস্ত ঘর। নিজস্ব চিত্র।
ঐতিহাসিক স্থাপত্যের সংরক্ষণে আগেই হেরিটেজ তকমা পেয়েছে জমিদার বাড়ি। সম্প্রতি জমিদার বাড়ির নিরাপত্তায় চারপাশে থাকা গড়খাই (পরিখা) সংস্কার শুরু হয়েছিল । তাতেই বিপত্তি বেধেছে। বৃষ্টিতে পরিখার একাধিক জায়গায় পাড় ধসে গিয়ে ঢালাই রাস্তা-সহ একাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে ফের ধস নামতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঢালাই রাস্তা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংস্কার ও স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন গ্রামের মানুষ।
বিংশ শতাব্দীর প্রাচীন পঁচেটগড় জমিদার বাড়ির বেশ কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন আজও অটুট রয়েছে। জমিদারি না থাকলেও জমিদার বাড়ির স্থাপত্য ধরে রাখতে বাড়ির সদস্যদের উপস্থিতিতে পঁচেট গড় সেবায়ত বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। দীর্ঘদিনের দাবি মেনে ত ২০১৮ সালে পঁচেটগড় জমিদার বাড়িকে রাজ্য সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগ হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে জমিদার বাড়ির সম্পত্তি সরকারি ভাবে সংরক্ষিত হলেও জমিদার বাড়ির সংস্কারে আজ পর্যন্ত হেরিটেজ বিভাগ উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ।
বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে জমিদার বাড়িকে কঠোর সুরক্ষা দিতে হাভেলির তিনদিক পরিখা খনন করা হয়েছিল। নদীপথের সঙ্গে সংযোগ ছিল সেই পরিখার। কথিত আছে জমিদার বাড়ির অন্দরমহল থেকে সুড়ঙ্গ পথে পরিখায় যাওয়ার রাস্তা ছিল। শত্রু আক্রমণ করলে সুড়ঙ্গ পথে গড়খাই হয়ে নদী পথে পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। মজে যাওয়া সেই গড়খাই সংস্কারের কাজ করছে স্থানীয় পঞ্চায়েত। সূত্রের খবর, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রায় কুড়ি একর জায়গা জুড়ে জমিদার বাড়ির গড়খাই সংস্কারের কাজ চলছে।
অভিযোগ, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে গড়খাই সংলগ্ন রাস্তার বেশ কিছু জায়গায় ধস নামে। গড়খাইয়ের পাড়ে বসবাসকারী আদিবাসী সম্প্রদায়ের একধিক ঝুপড়ি ধসের কারণে হেলে গড়খাইতে ধস নামায় পঁচেট গ্রামের উত্তর ও পূর্ব পাড়ায় সাধারণের যাতায়াতের ঢালাই রাস্তা বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। ফের ভারী বৃষ্টিতে নতুন করে ধস নামলে ঢালাই রাস্তা ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। এই রাস্তা হয়ে প্রতাপদিঘি, ভৈরবদাঁড়ি সহ একাধিক গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। এলাকার মানুষের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের অপরিকল্পিত সংস্কারের জন্যই এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অবিলম্বে রাস্তার সংস্কার-সহ দ্রুত স্থায়ী সমাধান এবং এলাকার মানুষের বসবাসের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন গ্রামবাসীরা। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিক নিরঞ্জন সিংহ বলেন, ‘‘গড়খাই কাটার ফলে মাটি বাড়ি ভিতরে চলে এসেছে। ধসে বাড়ির একদিক হেলে পড়েছে। বিপদ মাথায় নিয়েই বাস করতে হচ্ছে।’’
পঁচেটগড় সেবায়ত বোর্ড ও জমিদার বাড়ির সদস্য ফাল্গুনী দাস মহাপাত্র বলেন, ‘‘মানুষের স্বার্থে গড়খাই সংস্কারের কাজ করছে প্রশাসন। কাজ করতে গিয়ে রাস্তাঘাট ও মানুষের বাসস্থানের কিছু ক্ষতি হয়েছে। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করবো। ভবিষ্যতে মানুষের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সেদিকে জমিদার বাড়ির তরফে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করা হবে।’’
পটাশপুর-২ এর বিডিও শঙ্কু বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্থানীয় পঞ্চায়েত গড়খাই সংস্কারের কাজ করছে। ধস নেমে ক্ষতির বিষয়টি জানা নেই। পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করা হবে।’’