কংসাবতীর জল ঢুকল মেদিনীপুর শহরের পালবাড়ি এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।
টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশে। জেলায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা সবমিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ বলে প্রশাসনের এক সূত্রে খবর। অবিরাম বৃষ্টিতে কেশপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। মঙ্গলবার সেখানে জলে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছে এক বালকের।
স্থানীয় সূত্রের খবর, মৃতের নাম শেখ গিয়াসউদ্দিন। বছর দশেকের ওই কিশোরের বাড়ি আনন্দপুরের জগন্নাথপুরের কোঙর আয়মায়। এ দিন সকালে তিন বন্ধু মিলে বেরিয়েছিল গ্রামের অদূরে বন্যা দেখতে। জলের স্রোতে আচমকা তিনজনে তলিয়ে যায়। গ্রামবাসী দু’জনকে উদ্ধার করেন। তবে গিয়াসউদ্দিন ভেসে যায়। সকাল ১১টা নাগাদ ওই ঘটনার পরে নিখোঁজ বালকের খোঁজ শুরু হয়। ঘণ্টা চারেক পরে অদূরেই ওই কিশোরের দেহ উদ্ধার হয়েছে।
ফুঁসছে জেলার নদীগুলিও। মঙ্গলবার থেকে অবশ্য বৃষ্টি কমেছে। রোদেরও দেখা মিলেছে। ফলে, এ বার ধীরে ধীরে জল নামবে বলে আশা। জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি বলেন, ‘‘আশা করছি, এ বার পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’’ প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, জেলার ৩১২টি এলাকাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে জল জমে রয়েছে। এ দিন বিকেল জেলায় পর্যন্ত দুর্গতের সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৪৩৩। দুর্ভোগে পড়া মানুষের সংখ্যা বেশি ঘাটালে। ঘাটাল ব্লকে দুর্গত মানুষের সংখ্যা কমবেশি ৫৭,৩২৫। ঘাটাল শহরে দুর্গত কমবেশি ৩৯,৭০৫জন। পরিস্থিতি দেখে জেলায় সবমিলিয়ে ৩,৪০৬ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর উদ্যোগ হয়েছিল। এ দিন বিকেল পর্যন্ত ১,০৪৪ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে। এখন এঁরা ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন।
প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ৪৭টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল। এ দিন চালু ছিল ৪৪টি। তার মধ্যে চন্দ্রকোনা-১ ব্লকে ১০টি ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন ১২০ জন। চন্দ্রকোনা-২ ব্লকে ৮টি শিবিরে আছেন ৫০ জন। ঘাটালে ১১টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ২৩৫ জন। সব মিলিয়ে ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন ১,৩৪২ জন। জেলার প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, ত্রাণ সামগ্রীর অভাব নেই। এ দিন বিকেল পর্যন্ত জেলায় ৯,৯৪৪টি ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। ধুতি ১৬১টি, শাড়ি ১৭৫টি, চাদর ১৬৭টি, বেডশিট ৩৪৯টি বিলি করা হয়েছে। দুর্গত এলাকায় শিশুখাদ্য, শিশুদের পোশাক বিলি হয়েছে। ত্রাণের চালও পৌঁছনো হয়েছে। চন্দ্রকোনা-১ ব্লকে ৭ কুইন্টাল, চন্দ্রকোনা-২ এ ১৫ কুইন্টাল চাল বিলি হয়েছে।
সাম্প্রতিক দুর্যোগে বেশ কিছু নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেশপুর, মেদিনীপুর গ্রামীণেও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টানা বৃষ্টির জেরে মাটি নরম হয়ে এই বিপত্তি দেখা দিচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বাঁধের মেরামতি যাতে দ্রুত করা যায়, তা দেখা হচ্ছে। দুর্বল বাঁধগুলির দিকে নজর রাখা হয়েছে।’’
মুকুটমণিপুরে কংসাবতী জলাধার থেকেও ধাপে ধাপে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ৪০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছিল। মঙ্গলবার আরও পাঁচ হাজার কিউসেক হার বাড়ানো হয়েছে।ফের তো কিছু এলাকা ফের প্লাবিত হতে পারে? জেলা প্রশাসনের ওই আধিকারিক ের জবাব, ‘‘প্লাবিত হতে পারে, এমন এলাকাগুলির উপরে নজর রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’