Hearse van

সুযোগ বুঝে দর হাঁকানো!

মেদিনীপুরে শববাহী গাড়ি খুব কম নেই। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সংগঠন, ক্লাবের শববাহী গাড়ি রয়েছে। কিছু বেসরকারি শববাহী গাড়ি রয়েছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:২৭
Share:

মেদিনীপুর মেডিক্যালের সামনে শববাহী গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

অর্থাভাব। মায়ের মৃতদেহ শববাহী গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ নেই। তাই মায়ের মৃতদেহ কাঁধে তুলে নিয়ে গিয়েছেন দিনমজুর ছেলে। জলপাইগুড়িতে এমন মর্মান্তিক ছবি সামনে এসেছে। ঘটনার নেপথ্যে উঠে এসেছে বেসরকারি শববাহী গাড়ির জুলুমবাজিই। মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য দিনমজুর ছেলের কাছে তিন হাজার টাকা চেয়েছিলেন শববাহী গাড়ির চালক। তা দিতে পারেননি ছেলে। বাধ্য হয়েই কাঁধে মায়ের দেহ তুলে হাঁটা দিয়েছিলেন দিনমজুর যুবক। মেদিনীপুরেও সুযোগ বুঝে একাংশ শববাহী গাড়ির চালক চড়া দর হাঁকান বলে নালিশ। ঝাড়গ্রামেও শববাহী গাড়ির ক্ষেত্রে প্রতারিত হতে হয় মৃতের আত্মীয়দের।

Advertisement

মেদিনীপুরে শববাহী গাড়ি খুব কম নেই। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সংগঠন, ক্লাবের শববাহী গাড়ি রয়েছে। কিছু বেসরকারি শববাহী গাড়ি রয়েছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন। হাসপাতালের আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। মৃতদেহ নিয়ে সামান্য ক’কিলোমিটার যেতে দেড়- দু’হাজার টাকা দর হাঁকান শববাহী গাড়ির চালকেরা। বাধ্য হয়ে অনেকে দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য শববাহী গাড়ি না নিয়ে অন্য ছোট গাড়ির খোঁজ করেন। শহরের এক বাসিন্দা বলছিলেন, ‘‘হৃদরোগে আমার এক পরিচিত মারা গিয়েছিলেন। স্বল্প ভাড়ায় শববাহী গাড়ি জোগাড় করতে হিমশিম খেয়েছি। বেশি ভাড়া দিয়ে গাড়ি পেয়েছিলাম।’’ দর কেমন? শহরের মধ্যে হলেও ১,০০০- ১,২০০ টাকা নেয় একাংশ গাড়ি। শহরের বাইরে হলে কিলোমিটার প্রতি ১৫- ২০ টাকা। কেউ কেউ আরও বেশিও নেন! শববাহী গাড়ি রয়েছে, এমন এক ক্লাবের কর্তা বলছেন, ‘‘সাধারণের জন্য বিনামূল্যে নয়, আমরা সুলভ মূল্যে গাড়ি ভাড়ায় দিই। শহরের মধ্যে হলে ভাড়া ৮০০ টাকা। চালকই তো ৩০০ টাকা নেয়। রক্ষণাবেক্ষণের খরচও তো থাকে।’’ এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে বরুণবিকাশ দে শোনাচ্ছেন, ‘‘আমাদের শববাহী গাড়ি রয়েছে। যাঁদের ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য নেই তাঁদের থেকে ভাড়া নিই না।’’

মেদিনীপুরে অবশ্য শববাহী গাড়ি নিয়ে জুলুমবাজির বড়সড় অভিযোগ ইদানীংকালে সামনে আসেনি। তবে অনেকেই স্বল্প ভাড়ায় গাড়ি পেতে সমস্যায় পড়েছেন। মেদিনীপুরের এক পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘ইচ্ছে মতো ভাড়া কেউই চাইতে পারে না। কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এলে নিশ্চিতভাবেই আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’ এক শববাহী গাড়ির চালক শোনাচ্ছেন, ‘‘রেট চার্ট নেই। পুরসভা কিংবা পুলিশ- প্রশাসন যদি কোনও গাইডলাইন দেয়, আমরা অবশ্যই মেনে চলব।’’

Advertisement

শববাহী গাড়ি ঝাড়গ্রাম পুরসভার দু’টো থাকলেও একটি গাড়ি চলে। যে শববাহী গাড়িটি চলে সেই গাড়িটির অবস্থা খুবই খারাপ। ওই গাড়িটি আবার ঝাড়গ্রাম শহর ও শহর সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকা ছাড়া বাইরে কোথাও যায় না। গত ১৩ ডিসেম্বর নিজের বিধায়ক তহবিলের খরচে একটি শববাহী গাড়ি পুরসভাকে দিয়েছেন ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। সবুজ পতাকা নেড়ে গাড়িটির যাত্রা শুরু করেছিলেন বন প্রতিমন্ত্রী। সেই হয়েছিল যাত্রা। তারপর আর গাড়িটির যাত্রা হয়নি। পুরসভা সূত্রে খবর, চালকের অভাবে গাড়িটি চলাচল করেনি।

ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোনও রোগীর মৃত্যু হলে গাড়িতে করে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ‘দালাল চক্র’ সক্রিয় রয়েছে। অভিযোগ, হাসপাতালের একাংশ ওয়ার্ড বয় কমিশনের ভিত্তিতে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার গাড়ি ঠিক করে দেন। রোগীর পরিজনদের বাইরে বেরোনোর জো মাত্র নেই। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক গাড়ির চালক বলছেন, ‘‘জেলার মধ্যে কমপক্ষে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কমিশন নেয় ওয়ার্ড বয়রা। ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, কলকাতা হলে ১০০০ থেকে ২০০০ হাজা টাকা কমিশন নেয় ।’’ তবে ভাড়ার ক্ষেত্রে অন্য জেলার মত এখানে দাপট অনেকটা কম। মারুতি গাড়িতে বেলপাহাড়িতে কোনও মৃতদেহ ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা, বোলেরো বা অ্যম্বুল্যান্সের ক্ষেত্রে ২০০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত নেয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement