হাজির: ওদুলচুয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলছে পরিদর্শন। নিজস্ব চিত্র
জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের কাছে সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা পৌছে দিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি পরিদর্শন শুরু করল ঝাড়গ্রাম জেলা স্বাস্থ্য দফতর। ঝাড়গ্রাম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা সম্প্রতি বেলাপাহাড়ি ব্লকের তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। জেলার অন্যান্য ব্লকের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামোও পর্যায়ক্রমে পরিদর্শন করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
বুধবার সিএমওএইচ প্রকাশ মৃধা বেলাপাহাড়ি ব্লকের বিএমওএইচ উত্তম মাণ্ডিকে নিয়ে ওদুলচুয়া, এড়গোদা ও শিলাদার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। ঘুরে দেখেন কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো। ওদুলচুয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ব্লক শহর বেলাপাহাড়ি থেকে প্রায় ১২-১৩ কিলোমিটার দূরে। বছর কয়েক আগেও এই সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে তেমন পরিষেবা পেতেন না আমলাশোল, বালিচুয়া, কাঁকরাঝোড়ের মতো জঙ্গলে ঘেরা প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা। প্রসঙ্গত, এই সব এলাকায় লোধা, শবর-সহ অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাসই বেশি। ওদুলচুয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না থাকতেন চিকিৎসক, মিলত না ওষুধপত্রও। ফলে সামান্য অসুস্থতাতেই মানুষকে ছুটতে হত শিলদা কিংবা বেলাপাহাড়িতে। আর রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে, রাত কাটাতে হত বিনা চিকিৎসাতেই।
সিএমওএইচ প্রকাশ মৃধা ঝাড়গ্রাম জেলার দায়িত্ব পেয়েই ঘুরে দেখেন ওদুলচুয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ১০ শয্যা বিশিষ্ট এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনি বহির্বিভাগ এবং অন্তর্বিভাগ ঘুরে দেখেন। ঘুরে দেখেন কর্মীদের কোয়ার্টারও। কথা বলেন রোগীদের সঙ্গেও। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পানীয় জলের অসুবিধা রয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মূল অংশে টিন ও অ্যাসবেস্টসের ছাদ, ফলে গরমকালে রোগীদের খুব অসুবিধা হয়।
• ওদুলচুয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র— বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ, মূল কেন্দ্রের ছাদ, পানীয় জলের ব্যবস্থা , কর্মীদের কোয়ার্টার
• শিলদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র— বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ, কেন্দ্রের পরিকাঠামো, চিকিৎসক ও নার্সদের বসার জায়গা, কথা বলেন রোগীদের সঙ্গেও
• এড়গোদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র— বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ-সহ অন্যান্য বিভাগ, কথা বলেন চিকিৎসক, নার্স, রোগীদের সঙ্গে
* প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রই বেলপাহাড়ি ব্লকের। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পরিদর্শন করেন গত বুধবার, ২০ অক্টোবর।
সিএমওএইচ শিলদা ও এড়গোদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রও পরিদর্শন করেন প্রকাশ। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিদর্শন করার পর সিএমওএইচ প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত ওদুলচুয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা নিয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রত্যন্ত এলাকার লোধা, শবর-সহ অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষেরা যাতে রাতেও সরকারি চিকিৎসার সুযোগ পান, সে জন্য অতিরিক্ত অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা হবে। সে জন্য ওদুলচুয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একটি সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। এ ছাড়া স্থানীয় ব্যক্তিগত অ্যাম্বুল্যান্সের মালিকদের সঙ্গেও চুক্তি করবে স্বাস্থ্য দফতর। লক্ষ্য একটাই— যাতে রোদীকে দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনা যায়। এ ছাড়া ওদুলচুয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের টিন ও অ্যাসবেস্টসের ছাদের অত্যধিক গরম আটকাতে সিলিং দেওয়া ও পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা হবে। সিএমওএইচ প্রকাশ মৃধা বলেন, ‘‘বেলাপাহাড়ির তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিকাঠামোগত দিকগুলি খতিয়ে দেখেছি। ওদুলচুয়ায় অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়ার পরিকল্পনা আছে, বেসরকারি গাড়িও নেওয়া হবে। লোধা, শবর-সহ অনগ্রসর সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা কেউ যাতে সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’’