বিলি: দেওয়া হচ্ছে বিশেষ মশারি। নিজস্ব চিত্র
গত বছর নভেম্বরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল লক্ষ্মীরাম মান্ডি নামে বছর বারোর এক কিশোরের। বাড়ি বেলপাহাড়ির করকরায়। এরপর পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্তারা দেখেছিলেন, জঙ্গলমহলের এই এলাকায় ম্যালেরিয়া সংক্রমণের অন্যতম কারণ, মশারি ব্যবহারে অনীহা। পরিসংখ্যানও বলছে, ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ম্যালেরিয়ায় বছরে গড়ে ২-৩ জনের মৃত্যু হয়। গত বছর সংখ্যাটা পৌঁছেছিল ১৪-এ।
পরিস্থিতি দেখে এ বার বর্ষার অনেকটা আগেই এই দুই জেলার গ্রামাঞ্চলে মশারি বিলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই মশারি অবশ্য সাধারণ নয়, বিশেষ ধরনের মশারি। মশারির জালে মশা-প্রতিরোধী ওষুধ স্প্রে করা রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “বিশেষ এই মশারি বিলির পাশাপাশি মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচির উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধানের সংযোজন, “মানুষ সচেতন না হলে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা কঠিন। তাই যেখানে মশারি বিলি হচ্ছে, সেখানে সচেতনতা কর্মসূচিও হচ্ছে। রোগের উপসর্গ, কী ভাবে রোগ ছড়ায়, সাবধানতায় কী কী করা প্রয়োজন, তা মানুষকে জানানোর চেষ্টা করছি।”
ঝাড়গ্রাম জেলায় ২৯ হাজার আর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১১ হাজার, মোট ৪০ হাজার মশারি বিলি হবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গতবার যে সব এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি ছিল, সেই সব এলাকাতেই এই মশারি বিলি হচ্ছে। যেমন, মেদিনীপুর গ্রামীণের কনকাবতীতে ২,৩৫০টি, মালকুড়িতে ২,৪০০টি মশারি বিলি হবে।
কিন্তু মশারি বিলির পাশাপাশি তো মশার বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে জল জমা প্রতিরোধ, এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখাও জরুরি। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা মানছেন, “ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকাগুলোয় গিয়ে দেখা গিয়েছে, এলাকার পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নয়। এ দিক-সে দিকে জল জমে রয়েছে। জমে থাকা জলই তো মশার আঁতুড়ঘর।’’
এই অবস্থায় গতবারই চোখ রাঙিয়েছে ম্যালেরিয়া। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রথম দিকে স্বাস্থ্য দফতর তেমন গা করেনি। সেই সুযোগে রোগের প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। বছর ঘুরে ফের মশাবাহী রোগের মরসুম আসতে চলেছে। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধানের অবশ্য আশ্বাস, “জেলার প্রত্যন্ত এলাকাতেও মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলার সব রকম চেষ্টা চলছে। দিনে-রাতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমনোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’’