সার্থক বিজয়বত। ছবি: ফেসবুক।
প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ির দূরত্ব প্রায় পনেরোশো কিলোমিটার। ভর্তির পর থেকে মেলেনি আবাসিক প্রতিষ্ঠানে ক্লাস করার সুযোগ। করোনা আবহে গত দেড় বছরের বেশি চলেছে অনলাইন ক্লাস। পড়ুয়া মনে বাসা বাঁধছিল অবসাদ। এ বার বাড়িতেই সেই ছাত্রের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হল। এরপরই অনলাইন ক্লাসে পড়ুয়াদের মানসিকতা নিয়ে বিতর্ক উস্কে গেল খড়্গপুর আইআইটিতে।
বৃহস্পতিবার সকালে মধ্যপ্রদেশের ইনদওরের বাড়িতে উদ্ধার হয় সার্থক বিজয়বত (১৯) নামে এক তরুণের দেহ। তিনি খড়্গপুর আইআইটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বাড়ির বারান্দা থেকে গলায় দড়ির ফাঁসে ঝুলন্ত অবস্থায় সার্থকের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মেলে সুইসাইড নোট। সেখানে সার্থক লিখেছেন, “দুঃখিত। এখন কী বা বলতে পারি! যে আশা নিয়ে জয়েন্টের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম সেটা ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই সবটা বিগড়ে গিয়েছে। ভেবেছিলাম, ক্যাম্পাসে যাব, আনন্দ করব। আর কোথায় অনলাইন ক্লাসের অ্যাসাইনমেন্টে ফেঁসে গেলাম। হয়তো এই পরিস্থিতি কাটানো যেত। কিছু মানুষের কাছে উপায় ছিল, কিন্তু কিছু করল না। হয়তো কোনও অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে।”
আইআইটির মতো প্রযুক্তিবিদ্যার আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস পড়ুয়া মনে কী প্রভাব ফেলছে সেই বিতর্ক উস্কে দিয়েছে সার্থকের এই বয়ান। বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিয়ে আইআইটির ছাত্র সংগঠন জিমখানা স্টুডেন্ট সেনেট’-এ আলোচনাও হয়েছে। সেই আলোচনায় হাজির ছিলেন ডিন অফ স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্সও। অনলাইন ক্লাসের নানা সমস্যার কথা উঠে এসেছে সেই আলোচনায়। এর পরেই শুক্রবার সকালে আইআইটির সমস্ত অধ্যাপককে ই-মেল করেন ডিন। সেই ই-মেলে অনলাইন ক্লাসে পড়ুয়াদের মনের অবস্থা বুঝতে আরও দরদি হওয়ার আবেদন করেছেন তিনি। স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের ডিন ধ্রুবজ্যোতি সেন বলেন, “ওই পড়ুয়ার সুইসাইড নোটের সম্পূর্ণ বয়ান আমার জানা নেই। তবে সুডেন্ট সেনেটের আলোচনায় বিষয়টি উঠে এসেছিল। এমন ঘটনা যাতে না হয় সেই আর্জি ছাত্ররা জানিয়েছে। ছাত্রদের সমস্যা দেখেন ফ্যাকাল্টি অ্যাডভাইজাররা। তাঁদের এই বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছি।”
খড়্গপুর আইআইটির সেন্টার ফর এডুকেশনাল টেকনোলজির এক অধ্যাপক ফেসবুকে হ্যাসট্যাগ ‘আনলক ক্যাম্পাস’ লিখে ঘটনায় সরব হয়েছেন। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র বলেন, “দেড় বছরের বেশি বাড়িতে থেকে অনলাইন ক্লাসে আমরা দিশাহারা। শুধু ভাল ইন্টারনেট পরিষেবা থাকলেই অনলাইন ক্লাস সেরা হতে পারে না। শিক্ষকের সঙ্গে সমস্যার আদান-প্রদান না হওয়ায় ক্রমেই যেন চার দেওয়ালের ভিতরে পিছিয়ে যাচ্ছি। প্রতিষ্ঠানে বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে পড়ার আনন্দ থেকে বঞ্চনা কবে ঘুচবে জানি না!”
প্রতিষ্ঠান খোলায় সমর্থন জানালেও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের ছাড়পত্র না পাওয়ায় এখনই তা সম্ভব নয় বলে দাবি স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্সের ডিনের। আইআইটির রেজিস্ট্রার তমাল নাথ বলেন, “করোনা ও দেশের লকডাউন বিশ্বে সমগ্র মানবজাতির উপর প্রভাব ফেলেছে। ছাত্র সমাজ তার বাইরে নয়। আর প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে আমরা সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলছি। নানা পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে কিছু পড়ুয়াকে ফেরাচ্ছিও।”