প্রশ্নে শিল্পশহরের নিরাপত্তা

১৫ দিনে তিন ধর্ষণ 

নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পড়াশোনা বা কাজের সূত্রে রাত পর্যন্ত পথেঘাটে চলাফেরা করেন। প্রশ্ন উঠছে, তাঁরা সবাই সুরক্ষিত তো!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৫৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

গত পনেরো দিনে তিন তিনটি ঘটনা। প্রত্যেকটিই ধর্ষণের। একটি ক্ষেত্রে অভিযোগ তো আবার গণধর্ষণের। কলকারখানা আর বন্দরের শহর হলদিয়ায় এখন প্রশ্নের মুখে মেয়েদের নিরাপত্তা। প্রশ্নের মুখে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকাও।

Advertisement

শিল্প সংস্থার চাকচিক্য, ঝাঁ-চকচকে মল, মাল্টিপ্লেক্সের শহর হলদিয়া পূর্ব মেদিনীপুর তো বটেই, রাজ্যেরই অন্যতম শহর এলাকা। কিন্তু সেই চমকের নীচেই যে অন্ধকার, পরপর তিনটি ধর্ষণের ঘটনায় তা সামনে এসে গিয়েছে। সঙ্গে চেপে বসেছে ভয়। শহরে রয়েছে একাধিক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ, বহু শিল্প সংস্থা এবং কর্পোরেট অফিস। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পড়াশোনা বা কাজের সূত্রে রাত পর্যন্ত পথেঘাটে চলাফেরা করেন। প্রশ্ন উঠছে, তাঁরা সবাই সুরক্ষিত তো!

গত পনেরো দিনে তিনটি ধর্ষণের ঘটনা তোলপাড় করে দিয়েছে শিল্প-বন্দর শহরকে। গত ১ সেপ্টেম্বর দুর্গাচকের এক মহিলা চার যুবকের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ ছিল, কাজ সেরে রাতে বাড়ি ফেরার সময় ওই চার যুবক তাঁকে রাস্তা থেকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে পাশের পুকুর লাগোয়া ঝোপে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। পুলিশ অভিযুক্ত চার যুবককেই গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

দ্বিতীয় অভিযোগটি দায়ের হয় গত ৬ সেপ্টেম্বর। সে ক্ষেত্রে অভিযুক্ত আবার পুলিশ আধিকারিক! অভিযোগ, স্বামীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা সম্পর্কে তথ্য জানতে এসে ভবানীপুর থানার এক পুলিশ আধিকারিকের ‘কুনজরে’ পড়েন এক মহিলা। প্রথমে তাঁকে প্রলোভন দেখানো হয়। পরে স্বামীকে প্রাণে মারার ভয় দেখিয়ে মহিলাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত আধিকারিককে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। ব্যবস্থা বলতে ওইটুকুই।

আর শুক্রবার রাতের ঘটনায় তো শিউরে উঠছে গোটা শহর। পুর এলাকার মধ্যেই এক নাবালিকাকে প্রতিবেশী যুবক টিভি দেখার নাম করে ডেকে জোর করে মদ্যপান করিয়ে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ। তারপর শ্বাসরোধ করে মেয়েটিকে খুন করে বস্তায় ভরে দেহ লোপাটের চেষ্টাও করে অভিযুক্ত। তবে হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় সে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।

একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় আতঙ্কিত শহরের নানা বয়সী মহিলারা। হলদিয়া টাউনশিপের বাসিন্দা সরকারি কর্মচারী মানসী বেরা বলেন, ‘‘সিটি সেন্টারে নাইট শোয়ে সিনেমা দেখে প্রায়ই বান্ধবীরা বাড়ি ফিরি। ফিরতে ফিরতে রাত ১১টা বেজে যায়। এ সব শোনার পরে তো সত্যি ভয় লাগছে।’’ সদ্য কলেজ উত্তীর্ণ হলদিয়ার দুর্গাচকের বাসিন্দা স্বাগতা প্রামাণিকেরও বক্তব্য, ‘‘টিউশন সেরে রাত এগারোটায় বাড়ি ফিরি। এ রকম ঘটনা ঘটতে থাকলে তো আর রাতে বাইরে বেরোনো যাবে না।’’

প্রশ্ন উঠেছে রাতের শহরে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। যদিও পুলিশ বলছে, ধর্ষণের প্রতিটি অভিযোগের ক্ষেত্রেই দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়েছে। শহরের নিরাপত্তাও যথাযথ রয়েছে। হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তিনটিই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। হলদিয়ার রাস্তাঘাটে পুলিশ টহল দিচ্ছে। রাতেও আমরা গাড়ি নিয়ে টহলদারির ব্যবস্থা করেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement