আগুন দামে কাতর গৃহস্থ। হলদিয়ার মাখনবাবুর বাজারে। নিজস্ব চিত্র
পুজোর মুখে পেঁয়াজের দামের ছেঁকায় নাজেহাল গৃহস্থ। রাজ্যের প্রায় সমস্ত বাজারেই অগ্নিমূল্য পেঁয়াজ। হলদিয়ার বেশ কিছু বাজারে ইতিমধ্যেই দাম ছুঁয়েছে ৮০ টাকা কেজিতে। বিক্রেতারা জানান, এরকম চলতে থাকলে পুজোর সময় একশোর গণ্ডি পেরিয়ে যাবে পেঁয়াজ।
বুধবার শিল্পশহরের একটি শপিং মলের কর্মী সৌরভ মণ্ডল বলেন, ‘‘পেঁয়াজের জোগান নেই। আমাদের এখানে ৭২ টাকা কিলোপ্রতি বিক্রি করছি। অথচ সপ্তাহ খানেক আগেই ৩০ টাকা প্রতি কিলো বিক্রি হয়েছে।’’ এমন মূল্যবৃদ্ধির পিছনে কালবাজারি দেখছেন অনেকেই। হলদিয়ার মাখনবাবুর বাজারের এক বিক্রেতা জানান, পাইকারের কাছে এক মাসেরও বেশি সময়ের জন্য পেঁয়াজ মজুত থাকে। বৃষ্টি আর পুজোর সময় বেশি লাভের জন্যই এই দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকার চাইলে এই দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বাজারের এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘আমাদের এখানে মূলত পুণে, নাসিক থেকে পেঁয়াজ আসে। পাইকাররা বলছেন, সেখানে বন্যা হওয়ায় প্রচুর পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে।’’ পূর্ব মেদিনীপুরে খুবই অল্প পরিমাণে পেঁয়াজের চাষ হয়। পাঁশকুড়ার পেঁয়াজ চাষি বিবেকানন্দ মাইতি জানান, পেঁয়াজ জলে নষ্ট হয়ে যায়। মাটি থেকে একটু নীচে পেঁয়াজ থাকে। জল পেলেই পেঁয়াজ শেষ।
জেলার কৃষি আধিকারিক মৃণালকান্তি বেরা জানান, আমাদের রাজ্যে বর্ধমানে কিছু পেঁয়াজ হয়। চাহিদার বেশিরভাগই আসে নাসিক থেকে। সেখানে সমস্যা হলে দামের উপরে তার প্রভাব পড়ে। তবে এতটা দাম বাড়বে, ভাবা যায়নি।’’ পেঁয়াজের কালোবাজারি আশঙ্কা নিয়ে তিনি জানান, এ সব রুখতে সরকারের টাস্ক ফোর্স রয়েছে। হলদিয়ার এক কৃষি আধিকারিক জানান, চাহিদায় টান রয়েছে, তবে এত বেশি দামের কোনও যৌক্তিকতা নেই। কোথাও একটা সমস্যা রয়েছে। অবিলম্বে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তা না হলে পুজোয় ভুগতে হবে আম জনতাকে। এক ব্যবসায়ী জানান, দাম বাড়লেও কেজি প্রতি ৪০ টাকা সঠিক দর। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে। সরকার পেঁয়াজের কালোবাজারি বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিক।
হলদিয়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজারে পেঁয়াজের দামের দিকে নজর রাখা হয়েছে। শীঘ্রই বাজারগুলিতে অভিযান চালানো হবে। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুধাংশু মণ্ডল জানান, বৃষ্টির জন্য পেঁয়াজের দাম বাড়লেও এক লাফে এতটা কেন বাড়ল তা খতিয়ে দেখা হবে। দামের এমন বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। হলদিয়ার একটি শিল্পসংস্থার কর্মী বাবুলাল সিংহর অভিযোগ, ‘‘এক কেজি পেঁয়াজ কোথাও কোথাও একশো টাকাও নেওয়া হচ্ছে। সরকারি কোনও নজরদারিই নেই। মাঝখান থেকে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় আমাদের।’’
পুর পারিষদ আজিজুল রহমান বলেন, ‘‘পেঁয়াজের অগ্নিমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষ আমাদের কাছে অভিযোগ করছেন। অতীতেও এমন অবস্থায় ন্যায্য মূল্যে আলু ও পেঁয়াজ বিক্রি করা করা হয়েছে হলদিয়ায়। এ বারও প্রয়োজনে শিবির করে ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।’’