চিকিৎসা বর্জ্যে রুদ্ধ নিকাশি।
প্লাস্টিক থেকে শুরু করে শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য গিয়ে পড়ছে নিকাশি নালায়। বন্ধ হচ্ছে নালার মুখ। নিকাশি খালগুলোও সংস্কার হয় না দীর্ঘ দিন। ফলে, সামান্য বৃষ্টিতেই ভাসতে হয় হলদিয়াকে।
বাম আমল থেকে তৃণমূলের জমানা, হলদিয়াবাসীর নিকাশি দুর্ভোগের ছবিটা বদলায়নি। ঘুরেফিরে দোরগোড়ায় আরও একটি পুরভোট। তার আগে ফের নিকাশির হাল ফেরানোর দাবি উঠছে শহরে। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলের মানুষ চাইছেন, নিকাশির জন্য আলাদা মাস্টার প্ল্যান।
হলদিয়া পুরসভার ১ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড শিল্পাঞ্চলের মধ্যে পড়ে। এর মধ্যে ১ থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ড আবার এখনও পুরোদস্তুর শহর হয়ে ওঠেনি। সেখানে নিকাশি সমস্যা আরও জটিল। দুর্গাচকের বাসিন্দা স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুপম বিশ্বাস বলছিলেন, ‘‘আইআইটির মতো দক্ষ কাউকে দিয়ে নিকাশির মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা উচিত। নাহলে ভবিষ্যতে সমস্যা বাড়বে।’’ শহরের আর এক বাসিন্দা ইমদাদুল ইসলামেরও বক্তব্য, ‘‘শিল্পের কারণেই হলদিয়ার পরিচিতি। অথচ জল জমে ভোগান্তির শেষ থাকে না। ভবিষ্যতের কথা ভেবেই নিকাশির মাস্টার প্ল্যান করা দরকার।’’
প্লাস্টিক বর্জ্য, সিভিলের বর্জ্য, জানলা-দরজার ভাঙা কাচ আর আবর্জনা ফেলে হলদিয়া টাউনশিপের স্টেট ব্যাঙ্ক সংলগ্ন অন্যতম নিকাশি খাল বুজিয়ে ফেলার অভিযোগ ঘিরে সম্প্রতি আলোড়ন পড়েছিল। অভিযোগের তির ছিল ইন্ডিয়ান অয়েলের আবাসনের সাফাই সংস্থার বিরুদ্ধে। নির্দিষ্ট ভ্যাটে আবর্জনা না ফেলে খালে ফেলার অভিযোগের ভিত্তিতে পুরকর্তারা আগে বৈঠকও করেছেন। কিন্তু সমস্যা মেটেনি।
হলদি নদীর তীরে পুর এলাকার মধ্যেই ইন্ডিয়ান অয়েলের একাধিক আবাসন রয়েছে। এই আবাসনের বর্জ্য নিকাশি ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, মাখনবাবুর বাজার সংলগ্ন সেক্টর ১৭, সেক্টর ১২, সেক্টর ১০ এলাকাতেও নানা ধরনের বর্জ্য রাস্তায় ফেলা হচ্ছে। দুর্গন্ধে টিকতে পারছেন না এলাকাবাসী। বর্ষায় নোংরা জলে ভাসছে রাস্তা। হলদিয়া পুরসভার এগ্জিকিউটিভ অফিসার জগৎবন্ধু দাস বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। অবিলম্বে আবর্জনা সরীতে নির্দেশ দিয়েছি।’’
ইন্ডিয়ান অয়েলের আবাসনে সাফাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার কর্মী প্রসূন সাহু অবশ্য বলে, ‘‘শুধু আমরা নই, আরও অনেকে আবর্জনা ফেলেন।’’ হলদি নদী সংলগ্ন অংশে ফেলা আবর্জনা তাঁরা তুলে নেবেন বলেও জানান প্রসূনবাবু।
তবে শুধু ইন্ডিয়ান অয়েলের আবাসন সংলগ্ন এলাকায় নয়, শিল্পশহর জুড়েই বেহাল নিকাশির ছবি। হলদিয়ার সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডলেরও অভিযোগ, ‘‘নিকাশির কী হাল, তা হলদিয়াবাসী দেখছেন।’’ যদিও তৃণমূলের বিদায়ী বোর্ডের পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ মণ্ডলের দাবি, ‘‘নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হয়েছে। প্রচুর খাল সংস্কার হয়েছে।’’ আর বৃষ্টিতে জল জমার জন্য তিনি দায়ী করেছেন হলদিয়া বন্দরকে। দেবপ্রসাদবাবুর অভিযোগ, ‘‘বন্দরের কিছু কর্তার গাফিলতিতে নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খাল অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে, স্লুইস গেটও সময়মতো খোলা হচ্ছে না। তাই শহরের একাংশ ভাসছে।’’
তবে পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, নিকাশির মাস্টার প্ল্যানের কোনও পরিকল্পনা আপাতত নেই। পুরসভার এগ্জিকিউটিভ অফিসার জগৎবন্ধুবাবু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘নমামি গঙ্গে’-তে কয়েকবার সমীক্ষা হয়েছে। ওই প্রকল্পের মধ্যেই শহরে নিকাশির কাজ করার ভাবনাচিন্তা চলছে।’’