উন্নত ফসলের জন্য চাষের আগে জেনে নেওয়া দরকার মাটির স্বাস্থ্য ঠিক কেমন। চাষিকে সে বিষয়ে সচেতন করতে বেশ কয়েক বছর ধরেই উদ্যোগী হয়েছে সরকার। কিন্তু সার্বিক ভাবে সে কাজ এগোয়নি। এ বার সেই কাজেই ‘গ্রাম দূত’ নিয়োগ করতে চাইছে রাজ্য কৃষি দফতর। মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চাষির হাতে রিপোর্ট কার্ড তুলে দেবেন তাঁরা।
জাতীয় কৃষি মিশনের আওতায় ২০১৬ সালে শুরু হওয়া কৃষি দফতরের এই প্রকল্পে প্রতি ২.৫ হেক্টর সেচ সেবিত জমির জন্য একটি করে নমুনা নিয়ে মাটি পরীক্ষা করা হবে। সেচবিহীন জমির ক্ষেত্রে প্রতি ১০ হেক্টরে একটি নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পাঠাতে হবে। পরীক্ষিত এলাকার মধ্যে যত জন কৃষকের চাষযোগ্য জমি থাকবে, সবাইকে আলাদাভাবে মাটির স্বাস্থ্যের কার্ড দেওয়া হবে।
এ জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দফতরের কর্তারা। গ্রাম দূতেরা কৃষককে সঙ্গে নিয়ে কৃষি দফতরের মানচিত্র দেখে মাটি খুঁড়ে নমুনা সংগ্রহ করবেন। স্মার্ট ফোনের জিপিএস (গ্লোবাল পসিশনিং সিস্টেম) ব্যবহার করে অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ মেনে অনলাইনে জমির অবস্থান নথিভুক্ত করে দেবেন তাঁরা। উন্নত পরীক্ষাগারে সেই নমুনা বিশ্লেষণ করা হবে। তারপর সংশ্লিষ্ট কার্ডে লিখে দেওয়া হবে ওই জমিতে খনিজ পদার্থের পরিমাণ, সেখানে কী ধরনের সার দিতে হবে, কতটা দিতে হবে, কোন ফসল চাষ করলে ফলন বেশি হবে ইত্যাদি। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কার্ডে দেওয়া থাকবে কৃষকের মোবাইল নম্বর। সেই নম্বরেই রেজিস্ট্রেশন হবে ওই কৃষকের নাম। ফলে টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করলেই ওই চাষির জমির সমস্ত খতিয়ান উঠে আসবে কৃষি দফতরের কাছে। তারপর চাষির যাবতীয় সমস্যার সমাধান পাঠিয়ে দেওয়া হবে এসএমএসে।
২০১৬ সালে প্রকল্প শুরু হওয়ার সময় ৬৬ হাজার নমুনা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পূর্ব মেদিনীপুরে। সেই অনুযায়ী প্রায় ৩ লক্ষ কৃষকের হাতে মাটির স্বাস্থ্য কার্ড তুলে দেওয়ার কথা। কিন্তু সে কাজ তেমন এগোয়নি। জেলার সহ-কৃষি অধিকর্তা মৃণালকান্তি বেরা বলেন, “পর্যাপ্ত কর্মী নেই। তাই এখনও পর্যন্ত ৪০ হাজার কার্ড বিলি করতে পেরেছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই বিপুল সংখ্যক নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানোর জন্যই রাজ্য কৃষি দফতর থেকে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত গ্রাম দূত নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ জেলায় ৭৭ জন গ্রাম দূত নিয়োগ করা হবে। এ জন্য একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে রাজ্য সরকার মউ স্বাক্ষর করেছে।