ফাইল চিত্র।
জেলা সফরে এলেন কার্যত ‘হঠাৎ’ই। আর এসেই রাজ্যের শিল্প এবং বাণিজ্য সম্ভবনা নিয়ে তৃণমূল সরকারকের প্রবল সমালোচনা করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
আগামী সপ্তাহেই পূর্ব মেদিনীপুরে জেলা সফরে আসার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার আগে বুধবারই জেলার শিল্পশহর হলদিয়ায় আসেন সস্ত্রীক রাজ্যপাল। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ হলদিয়া বন্দরের পোর্ট হাউসে তিনি পৌঁছন। প্রায় আধ ঘণ্টা বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমারের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে রাজ্যপাল বন্দর পরিদর্শন করে এবং বন্দরের ‘শিপিং অপারেশন’ সরজমিনে দেখেন। বন্দরের টাগ ভেসেলে চড়ে বন্দর এলাকাও তিনি ঘুরে দেখেন। পরে বন্দর থেকে তিনি চলে যান হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস কারখানায়। কারখানার একটি মন্দিরে পুজো দেন।
দুপুর ১টা নাগাদ হলদিয়া বন্দরের অতিথি নিবাসে শিল্পাঞ্চলের আধিকারদের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যপাল। তারপরই একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারির কলকাতা হাই কোর্টের একটি পর্যবেক্ষণকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবাংলার সমস্ত প্রান্তেই নির্মাণ ক্ষেত্রে, ব্যবসায় সিন্ডিকেট এবং মাফিয়া সক্রিয়। হাই কোর্ট এ-ও বলছে রাজ্যের মানুষের মধ্যে ভয় ও ভীতির মনোভাব কাজ করছে।’’ এখানেই থামেননি রাজ্যপাল। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলার শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে একটি স্থবিরতা কাজ করছে। ওই ব্যবস্থাকে (সিন্ডিকেট ও মাফিয়া) উপড়ে ফেলতে না পারলে রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়।’’
উল্লেখ্য, গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট- ২০২২’ অনুষ্ঠিত হয়েছে কলকাতায়। বাণিজ্য সম্মেলনের শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের তরফে শিল্পের ব্যাপারে বঙ্গবাসীকে একাধিক প্রত্যাশার কথা শুনিয়েছেন। কিন্তু সেই শিল্পের পরিবেশ নিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন রাজ্যপাল। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শিবনাথ সরকার অবশ্য পাল্টা বলছেন, ‘‘সরকারি অর্থ ব্যয় করে এসে বিজেপি নেতাদের শেখানো বুলি আউড়ে গেলেন রাজ্যপাল। সিন্ডিকেট মাফিয়া প্রসঙ্গ অবান্তর। পশ্চিমবঙ্গে শ্রমিকেরা শান্তিতেই রয়েছেন।’’
এ দিন আধঘন্টার সাংবাদিক সম্মেলনের পর বেলা ৩টে নাগাদ হলদিয়া চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমে একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন রাজ্যপাল। তার পরেই তিনি কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তবে রাজ্যপালের এ দিনের শিল্প এবং বন্দর শহর হলদিয়ায় পরিদর্শন ঘিরে কৌতুহল তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছে, বন্দর বা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে রাজ্যপালের ওই সফর ছিল আকস্মিক। রাজ্যপালের মত ব্যক্তিত্বকে স্বাগত জানানোর বিষয়ে চার-পাঁচদিনও সময় মেলেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরা। কী বিষয়েই বা রাজ্যপালের এ দিনের এই সফর ছিল, সে নিয়ে নানা মহলে ধোঁয়াশা রয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের তৃতীয় দফার বর্ষপূর্তি রয়েছে আজ, বৃহস্পতিবার। তার আগে সরকারের তরফে যখন কয়েকশো হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের সম্ভবনা তুলে ধরা হয়েছে শিল্প সম্মেলনে, সে বিষয়টি কতটা সত্যি, তা খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন রাজ্যপাল। তৃণমূল নেতৃত্বের আবার অভিযোগ, রাজ্য সরকারের সমালোচনার উনি সফরে এসেছেন। হলদিয়ার পুরপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা সুধাংশু মণ্ডল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের আগে উনি সমালোচনা করতেই এসেছিলেন।’’ অন্যদিকে, বিজেপি প্রভাবিত ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের রাজ্য সহ-সভাপতি প্রদীপ বিজলি পাল্টা, ‘‘উনি যে কারণেই হলদিয়ায় আসুক না কেন, তা ঘিরে তৃণমূল নেতৃত্বের এত ভয় কেন?’’