tourist lodge

কর্ণগড়ে হচ্ছে পর্যটকদের কটেজ  

গত মাসে জেলা সফরে এসে কর্ণগড় মন্দিরের উন্নয়নে এক কোটি টাকা বরাদ্দ করার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শালবনি শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ০১:০৫
Share:

প্রকৃতির কোলে তৈরি হচ্ছে কটেজ। নিজস্ব চিত্র।

পর্যটকদের থাকার জন্য তৈরি হচ্ছে কটেজ। তৈরি করা হবে ফার্মও। সব মিলিয়ে সেজে উঠছে রানি শিরোমণির স্মৃতি বিজড়িত শালবনির কর্ণগড়। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে, শীতের মরসুমে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হতে পারে ইতিহাস-সমৃদ্ধ এই এলাকা। জানা গিয়েছে, পর্যটকদের থাকার কটেজ চালু হবে ডিসেম্বরেই।

Advertisement

জেলাশাসক রশ্মি কমলের কথায়, ‘‘কর্ণগড় সাজানোর কাজ চলছে। এলাকাটি সাজাতে নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ জেলাশাসক মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘এই এলাকার একটা ইতিহাস রয়েছে। ইতিহাসের টানেই বহু মানুষ ছুটে আসেন শালবনির কর্ণগড়ে। তাই এলাকার উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’ ইতিমধ্যেই এলাকায় নতুন রাস্তা তৈরি হয়েছে। সেতু তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। শালবনির বিডিও সঞ্জয় মালাকার বলেন, ‘‘এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

সংস্কার এবং সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ধ্বংস হতে বসেছিল রানি শিরোমণির গড়। দুর্গ না থাকলেও, রয়েছে দুর্গের অংশ বিশেষ। দুর্গের সেই অংশ বিশেষও আগাছায় ভরে গিয়েছিল। রানি শিরোমণির নেতৃত্বে চুয়াড় বিদ্রোহের ইতিহাস বহন করে চলেছে শালবনির এই এলাকা। এমন এলাকার কেন দেখভাল করা হচ্ছে না এবং দুর্গের অংশের সংস্কার-সংরক্ষণ করা হচ্ছে না, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। প্রশাসন সূত্রে খবর, বছর কয়েক আগে সংস্কারের উদ্যোগ করা হয়েছিল। সেই উদ্যোগ অবশ্য পরিকল্পনা, প্রস্তাবেই আটকে থেকে গিয়েছিল। চলতি বছরের গোড়ায় ফের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরিকল্পনামাফিক কাজও শুরু হয়েছে। জেলার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন আধিকারিক অয়ন নাথের কথায়, ‘‘এলাকাটি পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার সব রকম চেষ্টা হচ্ছে।’’

Advertisement

স্থানীয়দের অনেকে মানছেন, প্রশাসন উদ্যোগী না হলে রানির গড়ের ভাঙা ইটের স্মৃতিও হয়তো কিছুদিন পরে খুঁজে পাওয়া যেত না! কর্ণগড়ে এখন রয়েছে বলতে শুধু মহামায়ার মন্দির। রানি শিরোমণি এখানে পুজো দিতে আসতেন। গত মাসে জেলা সফরে এসে কর্ণগড় মন্দিরের উন্নয়নে এক কোটি টাকা বরাদ্দ করার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ইন্দ্রকেতু নামে এক রাজা এখানে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীকালে ইন্দ্রকেতুর ছেলে নরেন্দ্রকেতু মনোহরগড় স্থাপন করে সেখানে বসবাস শুরু করেছিলেন। রণবীর সিংহ নামে এক লোধা সর্দারকে সাম্রাজ্য শাসনের ভার দিয়েছিলেন তিনি। অপুত্রক রণবীর সিংহ অভয়া নামে এক মাঝির ছেলেকে পোষ্যপুত্র করে, তাঁর হাতে সাম্রাজ্য শাসনের ভার অর্পণ করেছিলেন। তারপর বংশ পরম্পরায় ওই শাসন চলতে থাকে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ১৭৫৫ সালে মৃত্যু হয় শেষ অপুত্রক রাজা অজিত সিংহের। তাঁর দুই রানি ছিলেন ভবানী ও শিরোমণি। রানি শিরোমণি ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনদের এককাট্টা করে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফলে ইংরেজদের কোপে পড়েছিলেন রানি। তাঁকে বন্দিও করা হয়েছিল। নাড়াজোলের রাজা আনন্দলাল খানের মধ্যস্থতায় চরম সাজা না হলেও তাঁকে আবাসগড়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়।

কর্ণগড়কে পর্যটন মানচিত্রে তুলে আনার দাবি দীর্ঘদিনের। স্থানীয়দের অনুযোগ, নেতা-মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময়ে এলাকায় এসে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু আশ্বাসেই অনেক কিছু আটকে থেকে যায়। শেষমেশ প্রশাসনিক পদক্ষেপে খুশি এলাকাবাসী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement