খড়্গপুরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে বাম প্রার্থী বর্ষা রায়চৌধুরীর প্রচার।
বড় সভা নয়, বাড়ি বাড়ি জনসংযোগেই জোর দিচ্ছে বামেরা। পুরভোটের প্রার্থীদের উদ্দেশে নেতৃত্বের পরামর্শ, এক-একটি বাড়িতে অন্তত চারবার করে যান। মানুষকে বলুন, বাম-আমলে কী উন্নয়ন হয়েছে একবার ভাবুন। আর এখন কী হচ্ছে তা দেখুন। তাহলেই তফাতটা বুঝতে পারবেন।
কেন এক-একটি বাড়িতে অন্তত চারবার করে যাওয়ার নির্দেশ? সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, ‘‘পুরভোটে প্রার্থী বাড়ি বাড়ি যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। আমরা এ বার বাড়ি বাড়ি প্রচারেই আরও জোর দিয়েছি।’’ সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণাও মানছেন, ‘‘আমরা প্রতিটি মানুষের কাছে যাওয়ার কথাই বলেছি। এটা ঠিক, কিছু দুর্বলতার জন্যই আমরা পিছিয়ে পড়েছি। এর জন্য আমরাই দায়ী। ভুলগুলো সংশোধন করেই আমরা এগোচ্ছি।’’
বিভিন্ন বয়সী ভোটারদের মন পেতেও তত্পর হয়েছেন বাম নেতৃত্ব। দলীয় প্রার্থীদের বলা হয়েছে, যুবক-যুবতীদের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলতে যুব কর্মীদের পাঠাতে হবে। মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে মহিলা পাঠাতে হবে কর্মীদের। জেলা বামফ্রন্টের শীর্ষ এক নেতার কথায়, “যে কোনও দলেরই রণকৌশল থাকবে। আমাদেরও রয়েছে। এটা তো ঠিক, একতরফা বক্তৃতা অনেকে পছন্দ করেন না। প্রার্থীদের তাই একতরফা গরম বক্তৃতার বদলে মানুষের প্রশ্নের জবাব দিতে বলা হয়েছে।”
আগামী ২৫ এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুরের ৬টি পুরসভায় নির্বাচন। বিগত ভোটগুলিতে বামেদের ধারাবাহিক রক্তক্ষরণ অব্যাহত এই জেলাতেও। এই পরিস্থিতিতে প্রার্থী তালিকায় কিছু নতুন মুখ এনে রাজনৈতিক জমি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে বামেরা। ছাত্র-যুব সংগঠন থেকে উঠে এসেছেন, এমন বেশ কয়েকজন নেতাকে এ বার প্রার্থী করা হয়েছে। পুরভোটের প্রচারে সম্প্রতি জেলায় এসেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। দলের এক সূত্রে খবর, সূর্যবাবুও জানিয়ে গিয়েছেছেন, প্রতিটি মানুষের কাছে যেতে হবে। বিরোধী দলের ঝান্ডা যাঁরা বইছেন, তাঁদের কাছেও যেতে হবে। দলের এক সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে সূর্যবাবুর এই পরামর্শ দলীয় প্রার্থীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন জেলার বাম নেতৃত্ব। সিপিএমের এক জেলা নেতার কথায়, “যাঁরা ওদের (তৃণমূল) ঝান্ডা বইতেন কিংবা বইছেন, সেই সব শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষকে লাল ঝান্ডার তলায় নিয়ে আসাটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। ওঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমাদেরই বলতে হবে যে লাল ঝান্ডা যদি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, তাহলে আপনিও নিশ্চিন্তে বাড়িতে থাকতে পারবেন। তৃণমূল করতে চাইলে স্বাধীন ভাবে তৃণমূলই করতে পারবেন!”
জেলার যে ৬টি পুরসভায় নির্বাচন আসন্ন, তার মধ্যে রেলশহর খড়্গপুর অন্যতম। ২০১০ সালের পুরভোটে ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে এখানে তৃণমূল পেয়েছিল ১৫টি ওয়ার্ড। পরে সিপিএমের দু’জন কাউন্সিলর কংগ্রেসে যোগ দেন। কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বেড়ে হয় ১৪। এরপরই তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে কংগ্রেস। পাশে দাঁড়ান বিজেপি এবং বাম সমর্থিত নির্দল কাউন্সিলর। অনাস্থায় পরাজিত হয় তৃণমূল। পুরবোর্ড গঠন করে কংগ্রেস।
রেলশহরের পুরবোর্ড এ বার একক ভাবে দখল করার কথা ভাবছেন না অতি বড় বাম নেতাও। তবে বাম শিবিরের দাবি, পুরবোর্ড গঠনে তারা নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে। আর সে জন্য প্রয়োজনীয় আসন জোটাতেই জোরকদমে প্রচার চলছে। আপাতত পাড়া-প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে। আগামী শুক্রবার প্রচারে আসার কথা সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের। পরের সপ্তাহে একাধিক জাঠা হতে পারে। জাঠায় থাকার কথা বাম নেতৃত্ব দীপক সরকার, তরুণ রায়, সন্তোষ রাণাদের।