ঠান্ডায় মুখ লুকিয়েছে অঙ্কুর, বীজতলা তৈরিতে বিপত্তি

ফণী, বুলবুল ঝড়ের পরে এবার এভাবে ঠান্ডার দাপট বজায় থাকলে ফের চাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:১১
Share:

ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে পলিথিন দিয়ে চারা ঢেকে দেওয়া হয়েছে। মাইশোরার পাতন্দা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

নেই নেই করে বছর শেষে ঝড়ো ইনিংস খেলছে ঠান্ডা। জেলায় এক ধাক্কায় তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়ায়ের কোটায়। তাতে জুবুথুবু যেমন আট থেকে আশি, তেমনই অঙ্কুরোদম হচ্ছে না বোরোচাষের বীজ ধানের। ফণী, বুলবুল ঝড়ের পরে এবার এভাবে ঠান্ডার দাপট বজায় থাকলে ফের চাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

Advertisement

জেলার কৃষকেরা জানাচ্ছেন, বোরো চাষের বীজতলা প্রস্তুত করতে প্রথমে বীজ ধানকে চটের বস্তাবন্দি অবস্থায় ৩৬ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর বীজ ধান ভর্তি বস্তাটি তুলে নিয়ে ২৪ ঘণ্টা রোদে ফেলে রাখতে হয়। ফের বীজতলা বস্তাটিকে ১২ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তার পরে বস্তাটিকে জল থেকে তুলে ধানের বীজগুলিকে বের করা হয়। ওই বীজধানগুলিকে চটের বস্তার সাহায্যে ১২ ঘণ্টা কৃত্রিম তাপের মধ্যে রাখলেই বীজধান থেকে বেরিয়ে আসে অঙ্কুর। কিন্তু চলতি শীতে ঠান্ডার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বীজধান থেকে অঙ্কুরই বার হচ্ছে না বলে অভিযোগ চাষিদের।

আবার যে সব চাষিরা তীব্র ঠান্ডা পড়ার আগে বীজধান জমিতে ফেলে দিয়েছিলেন, সেই সমস্ত বীজধান থেকে ইতিমধ্যে দুই থেকে তিন ইঞ্চি চারা ধানগাছ বেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ক’দিনের টানা ঠান্ডায় সেই ধানের চারাগুলির বৃদ্ধি কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি। অনেক জায়গায় আবার বীজতলাগুলিই হলুদ রং হয়ে মারা যাচ্ছে। ধান গাছের চারা বাঁচাতে কৃষকরা নানা ধরনের ছত্রাকনাশক, অনুখাদ্য ইত্যাদি প্রয়োগ করছেন। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে বোরো চাষের মরসুম পিছিয়ে যেতে পারে আশঙ্কা কৃষক মহলে। শুধু তাই নয়, বীজধান থেকে অঙ্কুর না বের হলে বা ধানগাছের চারাগুলি মারা গেলে ফের কৃষকদের বীজধান কিনতে হবে। এতে ব্যাপক আর্থিক সঙ্কটে পড়তে পারেন বোরো চাষিরা।

Advertisement

ঘোষপুর গ্রামের বাসিন্দা সমীর সামন্ত বলেন, ‘‘বুলবুলের জেরে আমন চাষে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছিলাম। আর এখন বোরো চাষে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠান্ডা। তিন কাঠা জমিতে বীজতলা ফেলেছিলাম। কিন্তু ঠান্ডার কারণে সেই চারা মারা যাচ্ছে। এতে চাষ পিছিয়ে যাবে। আমরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়ব।’’ বীজতলা জমিতে ফেলে দেওয়া চাষিরা ইতিমধ্যে সঠিক উত্তাপ তৈরি করতে বীজতলার জমিগুলিতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। পাতন্দা গ্রামের বাসিন্দা সহদেব মান্না বলেন, ‘‘অঙ্কুরিত অবস্থায় জমিতে বীজতলা ফেলেছি। কিন্তু ঠান্ডার কারণে চারাই বেরোয়নি। তাই পলিথিন দিয়ে জমি ঢেকে দিয়েছি। তবুও চারা বেরোচ্ছে না।’’

এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী? এই বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর আশিস বেরা বলেন, ‘‘খুব ঠান্ডার সময় বীজধান না ভেজানোই ভাল। এখনও বোরো চাষের সময় যথেষ্ট রয়েছে। যাঁরা বীজধান ভিজিয়ে ফেলেছেন, তাঁদের বলব হাল্কা গরম জল ছড়িয়ে বীজধানগুলিকে যতটা পারবেন উষ্ণতা দিন। প্রয়োজনে খড়, পুরনো লেপ, কম্বল ইত্যাদি ব্যবহার করুন। ধানের চারা হলদে হয়ে গেলে তাতে সামান্য পরিমাণ পটাশ, জিঙ্ক বা কোনও জৈব সার দেওয়া যেতে পারে। তবে কোনভাবেই ইউরিয়া দেওয়া যাবে না। বীজতলার জমিতে বিকেল বেলায় পাম্পের সাহায্যে জল ভরে দিয়ে সকালে সেই জল বের করে দিলে মাটিতে ঠাণ্ডার মাত্রা কমে যাবে। এতে বীজতলা মরার আশঙ্কা থাকবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement