বৈশাখী সংক্রান্তির গাজন তেঁতুলমুড়িতে

দিনভর উপোস। গ্রামের বাড়ি-বাড়ি ঘুরে তুলসী মঞ্চে ধুনো ছিটিয়ে পরিবারের মঙ্গলকামনা। তারপর সূর্যাস্তের সময়ে পুকুরে স্নান সেরে গনগনে আগুনে ঝাঁপ। যাবতীয় প্রথা মেনেই রবিবার থেকে খড়্গপুর গ্রামীণের তেঁতুলমুড়ি গ্রামের শুরু হয়েছে গাজন উৎসব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৭ ০১:১৩
Share:

প্রথা: কসরতে ব্যস্ত গাজনের সন্ন্যাসীরা। নিজস্ব চিত্র

দিনভর উপোস। গ্রামের বাড়ি-বাড়ি ঘুরে তুলসী মঞ্চে ধুনো ছিটিয়ে পরিবারের মঙ্গলকামনা। তারপর সূর্যাস্তের সময়ে পুকুরে স্নান সেরে গনগনে আগুনে ঝাঁপ। যাবতীয় প্রথা মেনেই রবিবার থেকে খড়্গপুর গ্রামীণের তেঁতুলমুড়ি গ্রামের শুরু হয়েছে গাজন উৎসব। স্থানীয় গাজন ময়দানে উৎসব চলবে ১৭ মে পর্যন্ত। বৈশাখ মাসের সংক্রান্তিতে এই উৎসব চলছে প্রায় দেড়শো বছর ধরে। চারদিনের উৎসবের প্রথম দু’দিন শিব-গাজন উপলক্ষে মঙ্গলকামনায় চড়কের আয়োজন করা হয়। বাকি দু’দিন থাকে যাত্রাপালার আয়োজন। আর চারদিন ধরেই চলে গ্রামীণ মেলা। আজ, সোমবার এই গাজন উৎসবের মূল অনুষ্ঠানটি হবে। তার আগে থেকেই ভিড় জমাতে শুরু করেছেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ।

Advertisement

গ্রামবাংলায় চৈত্র সংক্রান্তির গাজনই জনপ্রিয়। বৈশাখ মাসের সংক্রান্তিতে গাজন সে ভাবে দেখা যায় না। কথিত আছে, খড়্গপুর গ্রামীণ ও নারায়ণগড়ের সীমানাবর্তী এই তেঁতুলমুড়িতে গ্রামবাসীদের মঙ্গল কামনায় এক সময়ে এই শিব-গাজন শুরু হয়েছিল। তখন শিবমঙ্গল কাব্যপাঠ শুনে গাজনের সন্ন্যাসীরা চড়কে ঝুলে আগুনে ঝাঁপ দিতে প্রস্তুত হতেন। সেই ঐতিহ্য আর নেই। শিবমঙ্গল কাব্যপাঠ আর হয় না। তবে এখনও বৈশাখী সংক্রান্তির আগের দিন থেকে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে যান গাজনের সন্ন্যাসীরা। তারপর একে একে মানা হয় যাবতীয় প্রথা। এ দিন অবশ্য আগুনে ঝাঁপ দেননি গাজনের সন্ন্যাসীরা। শুধু চড়কে ঝুলেছেন। আজ, সোমবার চড়কে ঝোলার পরে আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার প্রথা পালন করা হবে।

বৈশাখী সংক্রান্তির গাজন দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমিয়েছেন অনেকে। খড়্গপুরের কৌশল্যা থেকে এসেছিলেন স্কুল শিক্ষক ফাল্গুনিরঞ্জন রাজ। তিনি বলেন, “এখানে আমার মামাবাড়ি। ছোট থেকেই দেখছি এই উৎসব ঘিরে এলাকাবাসীর আলাদা আবেগ রয়েছে। চৈত্রের চড়ক তো সর্বত্র হয়। কিন্তু বৈশাখের শেষে এমন গাজন দেখার সুযোগ সব জায়গায় মেলে না।” এই বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে বাঁচুক বৈশাখী গাজন, এমনটাই চায় তেঁতুলমুড়ি। স্থানীয় বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর দুর্গাপদ মাইতি বলছিলেন, এই উৎসবের ঐতিহ্য নজরকাড়া। তবে দিন যত যাচ্ছে পুরনো প্রথা ফিকে হয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, আগামী দিনে একই ভাবে এই গাজন বেঁচে থাকুক।”

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement