বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
বেলপাহাড়িতে একদিনে হাতির হানায় তিনজন মৃত্যুতে নড়েচড়ে বসল বন দফতর। ঘটনার পরই শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করলেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
জানা যাচ্ছে, হাতিকে জঙ্গলে আটকে রাখতে পদক্ষেপ হচ্ছে। হাতির থাকার ও খাওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থার জন্য ময়ূরঝর্না প্রকল্পের কাজ চালুরও সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। বনমন্ত্রী জানান, দক্ষিণবঙ্গে ১৬টি জায়গায় ঘেরাটোপে হাতির থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে বনমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘ঝাড়খণ্ড থেকে হাতি আমাদের রাজ্যে ঢুকিয়ে পরিখা কেটে জল ঢেলে দিচ্ছে। গত দু’সপ্তাহে ঝাড়খণ্ড থেকে ২৭টি হাতি ঝাড়গ্রামে ঢুকেছে। নেপাল ও ভুটানও একই কাজ করছে। হাতি নিয়ে আমাদের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে ওরা।’’তবে অধিকাংশ মৃত্যু দলছুট হাতির হানায় হচ্ছে। বনমন্ত্রীর মতে, ‘‘উত্তরবঙ্গে হাতি দলছুট হয় না। সারিবদ্ধ ভাবে যায়। দক্ষিণবঙ্গে জঙ্গল কেটে দেওয়ায় হাতি দলছুট হয়ে পড়ছে।’’
হাতিদের সংরক্ষিত এলাকা গঠনে বাম আমলে ময়ূরঝর্না প্রকল্পের প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা আদপে কিছুই হয়নি। ফলে ক্রমেই বাড়ছে হাতি-মানুষের সংঘাত। হাতির হানায় সাধারণ গ্রামবাসীর মৃত্যু হচ্ছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। চলতি আর্থিক বর্ষে হাতির হানায় ঝাড়গ্রাম ও খড়্গপুর ডিভিশন মিলিয়ে মোট ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঝাড়গ্রাম ডিভিশনেই ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বেলপাহাড়ি ব্লকের ভুলাভেদা রেঞ্জের জঙ্গলে মহুল ফুল কুড়োতে গিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর শুক্রবার রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বনবল শীর্ষ) সৌমিত্র দাশগুপ্ত, অতিরিক্ত মুখ্য সচিব বিবেক কুমার, প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায় সহ বিভিন্ন আধিকারিকদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের জরুরি বৈঠক করেছেন বনমন্ত্রী। মন্ত্রীর নির্দেশে এ দিন বেলপাহাড়িতে গিয়েও বৈঠক করেন বন দফতরের শীর্ষ কর্তারা।
২০০০ সালের অক্টোবরে দক্ষিণবঙ্গে প্রাথমিক ভাবে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের অংশ বিশেষ নিয়ে মোট ৪১৪ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ময়ূরঝর্নায় ‘এলিফ্যান্ট রিজ়ার্ভ’ তৈরির জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। তবে বাম আমলে কাজ আর এগোয়নি। বনমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘ওরা করতে পারেনি। কারণ, এটা বাস্তবায়িত করার জন্য সংস্থাকে দায়িত্ব দিতে হবে। বন দফতর কী করে করবে? বন দফতরের পরিকাঠামো নেই।’’
উল্লেখ্য, তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ময়ূরঝর্না প্রকল্প বাস্তবায়নে ঝাড়গ্রামে বন্যপ্রাণ শাখা (দক্ষিণ বিভাগ) তৈরির সিদ্ধান্তও হয়েছিল। পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে ওই বন্যপ্রাণ শাখা গঠন ও ময়ূরঝর্না প্রকল্প রূপায়ণে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। কিন্তু তারপরও কিছু হয়নি। ফের সেই প্রকল্প চালুর কথাই বলা হচ্ছে। বনমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রথমে ফলের গাছ ও জলের ব্যবস্থা করা হবে। তারপর পরিখা কেটে ব্যাটারি চালিত ফেন্সিং করা হবে। ওই এলাকায় হাতি থাকবে। প্রকল্পটি রূপায়ণ করবে একটি সংস্থা।’’ মন্ত্রী জানান, উত্তরবঙ্গ থেকে চারটি কুনকি হাতি নিয়ে এসে দক্ষিণবঙ্গে হাতিদের সঙ্গে ছাড়া হবে। এতে হাতি শান্ত থাকবে।