বিলি করা লিফলেট —নিজস্ব চিত্র।
বিয়েবাড়ি হোক বা শ্রাদ্ধানুষ্ঠান, অথবা যে কোনও আইনি সমস্যায় গ্রাম কমিটির বিচারই হবে শেষ কথা। গ্রাম কমিটির বিচারে যিনি দোষী ‘প্রমাণিত’ হবেন, তাঁকে মন্দিরের উন্নতিকল্পে আর্থিক জরিমানা দিতে হবে!
এমনই ফরমান জারি করে লিফলেট বিলি করেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল ব্লকের লক্ষ্যা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের চকদ্বারিবেড়্যা পশ্চিম পল্লির গ্রাম কমিটির সদস্যেরা। সোমবার এই নিয়ে শোরগোলের পর সালিশি সভা আয়োজনের লিফলেট বিলির দায়ে গ্রাম কমিটির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করল মহিষাদল থানার পুলিশ। মঙ্গলবার ধৃতদের হলদিয়া মহকুমা আদালতে তোলা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক পূর্ণেন্দুকুমার মাজি জানিয়েছেন, ‘‘গ্রামবাসীদের থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরেই তদন্তে নামে মহিষাদল থানার পুলিশ। গ্রাম কমিটির সদস্যদের ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরেই গ্রাম কমিটির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ বিস্তারিত তদন্তের পরেই গোটা বিষয়টি পরিষ্কার হবে বলেই জানিয়েছেন তিনি। যদিও গ্রামবাসীদের একাংশের পাল্টা দাবি, গ্রামের নানা বিষয়ে অবাঞ্ছিত পুলিশি হস্তক্ষেপের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল গ্রাম কমিটির তরফে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লক্ষ্যা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের চক দ্বারিবেড়্যা গ্রামের পশ্চিম পল্লিতে সব মিলিয়ে প্রায় ১৩০টি পরিবার রয়েছে। কিছুদিন আগেই গ্রাম কমিটির কয়েকজন মাতব্বর ১২ দফা নির্দেশিকা সম্বলিত লিফলেট বাড়ি বাড়ি বিলি করেন। এই নিয়ে গ্রামে চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কার নির্দেশে এমন ফরমান দেওয়া হয়েছে জানতে রবিবার সন্ধ্যায় গ্রামের হরিমন্দিরে একটি বৈঠকে হয় গ্রামবাসীদের। সেখানে গ্রাম কমিটির সদস্যদের ঘিরে বিক্ষোভ হয়। সূত্রের খবর, কারা এই লিফলেট কান্ডের পেছনে তা স্পষ্ট না করলেও গ্রাম কমিটির কয়েক জন সদস্য লিফলেট বিলির জন্য ভুল স্বীকার করে নেন।
তবে সোমবার এই সংক্রান্ত খবর ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। এই বিষয়ে গ্রামের অন্যsরা বিশেষ মুখ খুলতে রাজি না হলেও বিজেপি-র স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য স্বপন দাস বলেন, “গ্রাম কমিটির নামে কয়েকজন এলাকায় শতাব্দী প্রাচীন নিদান চালু করার চেষ্টা করেছে। আজকের দিনে এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। আগামী দিনে কোনও গ্রাম কমিটি যেন এমন ব্যবস্থা চালু করতে না পারে, সে দিকে প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া দরকার।’’