চলছে মাছের চাষ। নিজস্ব চিত্র।
লাভ বেশি, তাই কদরও বেশি।
বছর খানেক ধরেই পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় মাছ চাযের প্রবণতা বাড়ছে। জেলার মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের ২৫ টি ব্লকের মধ্যে ২১ টি ব্লকেই এখন ভেনামি, বাগদা-সহ নানা ধরনের মাছের চাষ করা হচ্ছে। বিশেষত উপকূলবর্তী কাঁথি-১, ৩, রামনগর-১, ২, খেজুরি, নন্দীগ্রাম-১, ২, দেশপ্রাণ, নন্দকুমার, চণ্ডীপুর ব্লকগুলিতে মাছ চাষের রমরমা। মূলত আবাদি জমির একাংশের মাটি তুলে অগভীর জলাশয়ে বানিয়ে এই মাছ চাষ চলছে। জানা গিয়েছে, সারা জেলার প্রায় ৩৫ হাজার জলাশয় তৈরি করা হয়েছে মাছ চাষের জন্য। প্রায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ১৬ হাজার মৎসচাষি রয়েছেন।
মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, আগে মাছ অন্য রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে আমদানি করতে হত। বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে রুই, কাতলার পাশাপাশি অন্যান্য দেশি মাছ আমদানি করা হত। এখন এই রাজ্যের মাছই পাড়ি দিচ্ছে ভিন রাজ্যে। বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খন্ড এমনকী অন্ধ্রপ্রদেশেও। মৎস্য দফতরের নথি অনুযায়ী হলদিয়ায় নতুন করে মাছ চাষে নাম লিখিয়েছেন জনা কুড়ি জন।
হলদিয়ার বাড়ঘাসিপুরের মাছ চাষি পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দেশি মাছ ফলনের মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান গড়ে উঠছে। সরকারি সাহায্য স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করছে।” দাড়িবেড়িয়ার মাছ চাষি নারায়ণ বর্মণ ও আরতি বর্মণের কথায়, ‘‘মাছ চাষে লাভের বিষয়টি আছে ঠিকই। তবে এই চাষের ওপর নির্ভর করে বহু পরিবার জীবনধারণ করছে। দেশি মাছকে এবার ভিন দেশেও পাঠাবার চেষ্টা করছি।” মৎস্যজীবীদের দাবি, দেশি মাছ ধীরে ধীরে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তবে স্বরপুটি, কই, ট্যাংড়া, শাল মাছের চাহিদা আছে। রুই, কাতলা, মৃগেলের পাশাপাশি কাঁকড়া, চিংড়ি এবং মৌরলা মাছ চাষ করে ধানের থেকে বেশি লাভ পাওয়া যাচ্ছে। আর এই সমস্ত মাছে হাই-প্রোটিন রয়েছে। ফলে মানুষের উপকারে এইসব মাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মৎস্য দফতরের হলদিয়া মহকুমার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সুমন সাহু জানান, মৎস্যজীবীদের বিভিন্ন প্রকল্প পৌঁছে দিয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। মাছের চারা থেকে আর্থিক ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। এমনকি সরকারি সহায়তায় প্রযুক্তিগত সাহায্যের পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। যেসব মৎস্যজীবী বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে মাছ চাষ করে সফল হচ্ছেন তাঁদের উৎসাহ বাড়াতে পুরস্কারও দেওয়া হচ্ছে। মাছ চাষ বাড়লে শুধু জেলা নয়, গোটা পশ্চিমবঙ্গে সুলভে মাছ পাবে সাধারণ মানুষ। দেশি মাছ সংরক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে ভিন রাজ্যে তথা ভিন দেশেও তা পাঠালে পশ্চিমবঙ্গের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের পথ প্রসস্থ হবে বলে মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মত।
এ বিষয়ে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘মাছ চাষে আমরা রাজ্যকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চাইছি। তাই মাছ চাষে জোর দেওয়া হচ্ছে। দেশি মাছের উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। কেউ চাষে আগ্রহী হলে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হবে।”
তথ্য সহায়তা: আনন্দ মণ্ডল।