ফিরহাদ হাকিম। ফাইল চিত্র।
মাস দুয়েক ধরে শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে দোলাচলে ছিল তৃণমূল। আলাপ-আলোচনায় কার্যত ফল না হওয়ায় শুভেন্দু অধিকারী এখন ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার’ বলে সাফ জানানো হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে। এই অবস্থায় হলদিয়া পুরসভার কাউন্সিলরদের পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়ে কপালে ভাঁজ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের। আর তাই বিধানসভা নির্বাচনের আগে হলদিয়া পুরপ্রধান-সহ কাউন্সিলারদের কলকাতায় তৃণমূল ভবনে তলব করলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী। যা কাউন্সিলারদের গতিবিধি নজরে রাখার পাশাপাশি গদি বাঁচালোর কৌশলী পদক্ষেপ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার দুপুরে তৃণমূল ভবনে সমস্ত কাউন্সিলরদের ডাকা হয়েছে। কিছুদিন আগে হলদিয়ায় দলীয় সভায় মঞ্চে সুজিত বসু এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েট তৃণমূল নেতারা উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও হলদিয়ার পুরপ্রধান শ্যামল আদক সহ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর ওই সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। যা নিয়ে জল্পনা বেড়েছে তৃণমূলের অন্দরে। কারণ, পুরপ্রধান-সব ওই সব কাউন্সিলর দলে শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ফলে বতর্মানে পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব তাঁরা অস্বীকার করতে চাইছেন কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্রের খবর, রবিবার রাতে হলদিয়ার দুর্গাচকে পুরপ্রধান সহ একাধিক কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠক করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। অন্তত ১০-১২ জন কাউন্সিলর সেখানে ছিলেন। তেমনই এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘গদি বাঁচাতে গেলে একটু কৌশলী হতে হবে। মন থেকে অনেকেই শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী। কিন্তু পদ যাওয়ার ভয়ে তাঁরা প্রকাশ্যে তা বলতে পারছেন না।’’ তৃণমূলের একাংশের মতে, এ ছাড়া একাধিক কাউন্সিলর বকলমে ঠিকাদারির সঙ্গে যুক্ত। ক্ষমতায় না থাকলে তাদের অর্থের সংস্থান হবে না। পাশাপাশি মিথ্যে মামলায় ফেঁসে যাওয়ার ভয় তো রয়েছেই। ফলে আপাতত দল তথা মমতার সঙ্গে থাকাটাই শ্রেয় মনে করছে তারা। যদিও তারা কাজ করবেন শুভেন্দু অধিকারীর হয়ে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, পুরমন্ত্রী সমস্ত কাউন্সিলরকে তলবের পরে আগামী দিনে নিজের রণনীতি ঠিক করার জন্যই রবিবার শুভেন্দু তাঁর ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেন। তবে এই বৈঠকে কারা কারা ছিল তার তালিকা তৃণমূলের রাজ্য দফতরে পৌঁছে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন শাসক দলের নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে খবর, কাউন্সিলরদের গতিবিধির উপরে নজর রাখতে তৃণমূলের লোকজনদের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছেন পিকের টিমের সদস্যরা। তাদের মাধ্যমে গোপন খবর সংগ্রহ করা হচ্ছে।
যদিও এত সবের পরেও স্বস্তিতে নেই রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রকাশ্যে কাউন্সিলাররা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকার কথা বললেও ভিতরে ভিতরে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের সম্ভাবনা চিন্তায় রেখেছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে।