লেলিহান: তখনও আড়াবাড়িতে আগুন জ্বলছে। নিজস্ব চিত্র
প্রকৃতির রোষানলে আগুনে পুড়ে খাক বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের জঙ্গল। সেই প্রকৃতিই বড় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল পশ্চিম মেদিনীপুরের আড়াবাড়ির জঙ্গলকে।
বুধবার সন্ধ্যেয় আগুন লাগে চন্দ্রকোনা রোড ও শালবনি ব্লকের মাঝামাঝি আড়াবাড়ির জঙ্গলের একাংশে। এই জঙ্গল ভেদ করে গিয়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। জাতীয় সড়কের পশ্চিম দিকে ফিল্ম সিটির পাশেই আটাবান্দা মৌজার শাল গাছের জঙ্গলে আগুন লাগে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গলে আগুন লাগার পরই কালবৈশাখীর ঝড় শুরু হয়। ঝড়ের হাওয়ায় আগুন ছড়াতে থাকে দ্রুতগতিতে। এই সময় গাছের ঝরা পাতা স্তূপাকার হয়ে থাকে জঙ্গলে। আগুন ছড়ায় সেখানেও। খবর পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে আড়াবাড়ি রেঞ্জের বনকর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। আর যাতে আগুন না বাড়ে সে জন্য স্তূপাকার শালপাতা আলাদা করার চেষ্টা হয়।
আগুন আয়ত্তে না আসায় খবর দেওয়া হয় পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের কাছে। খবর যায় দমকলেও। ততক্ষণে ঝড়ের হাওয়ায় আগুন বেড়েই চলেছে। এমন সময় ঝড় থেমে জঙ্গলে নামে প্রবল বৃষ্টি। আগুনের তীব্রতা কমতে থাকে। পরে দমকলের দু’টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় আগুন নেভান বনকর্মীরা। ততক্ষণে প্রায় এক হেক্টর জঙ্গলের শালপাতা পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। আড়াবাড়ির রেঞ্জ অফিসার মলয়কুমার ঘোষ বলেন, ‘‘ঝড়ের দমকা হাওয়ায় আগুন ক্রমেই বাড়ছিল। বৃষ্টিই আমাদের বাঁচিয়ে দিল। দমকলও সেই সময়ে এসে আগুনকে নিয়ন্ত্রণে আনে।’’
এখন আড়াবাড়ির নার্সারিতে শাল, পিয়াল, মহুয়া ইত্যাদি গাছের সাড়ে ৪ লক্ষ চারা তৈরি হচ্ছে। যা বনসৃজনের জন্য করা হচ্ছিল। যদিও যেখানে আগুন লেগেছিল সেই আটাবান্দার শালজঙ্গল থেকে ওই নার্সারির দূরত্ব অনেকটাই। তবুও ঝড়ের দমকা হাওয়ায় আগুনের তীব্রতা যে ভাবে বাড়ছিল তাতে জঙ্গলকে গ্রাস করার সম্ভাবনা ছিল বলে মনে করছেন বনকর্মীরা।
বনদফতরের মেদিনীপুর ডিভিশনের ডিএফও সন্দীপ বেরোওয়াল বলেন, ‘‘আগুন লাগলেও খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ঝরা পাতাতেই আগুন ছিল, তাই গাছের ক্ষতি হয়নি।’’ বন দফতর মনে করছে শুশুনিয়ার মতো আড়াবাড়ির আটাবান্দার শাল জঙ্গলেও আগুন লাগানো হয়েছে। ডিএফও বলেন, ‘‘এখন জঙ্গলে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে অনেকের। তাঁরাই আগুন লাগাতে পারে, আমরা খতিয়ে দেখছি।’’
বুধবারই আগুন লেগেছিল গোয়ালতোড়ের রামগড়ের জঙ্গলে। বনকর্মীরা সেই আগুন নেভাতে সচেষ্ট হলেও বন দফতর জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনায় যথেষ্টই উদবিগ্ন। রূপনারায়ণ বিভাগের ডিএফও মনীশ যাদব বলেন, ‘‘জঙ্গলে আগুন না লাগাতে মাইক প্রচার-সহ বিভিন্ন উপায়ে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। তবুও তা ঘটছে।’’