জতুগৃহ হাসপাতাল

ফের হাসপাতালে আগুন। এ বার এগরার নতুন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। পশ্চিম মেদিনীপুরের নির্মীয়মাণ সুপার স্পেশ্যালিটিগুলোর অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার হাল ঠিক কীরকম? সরেজমিনে খোঁজ নিল আনন্দবাজার। গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে ঝাঁ-চকচকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তৈরি হয়েছে একের পর এক মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। কিন্তু এগরার নির্মীয়মাণ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আধুনিক এই হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা বেআব্রু অবস্থা।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩৮
Share:

ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটিতে র্যাম্পের ব্যবস্থা নেই। ফাইল ছবি

গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে ঝাঁ-চকচকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তৈরি হয়েছে একের পর এক মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। কিন্তু এগরার নির্মীয়মাণ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আধুনিক এই হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা বেআব্রু অবস্থা।

Advertisement

ঘটনার পরে খোদ চিকিৎসক ও কর্মীদের একাংশ মানছেন, ঝাড়গ্রাম, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর ও ঘাটালের মতো সুপার স্পেশ্যালিটিতেও আগুন লাগলে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বহুতল ভবনগুলি লিফট নির্ভর। এ ছাড়া সিঁড়ি রয়েছে। অথচ আপৎকালীন সময়ে রোগীদের নিচে নামিয়ে আনার জন্য র‌্যাম্পের ব্যবস্থা নেই। এটা সবচেয়ে বড় পরিকল্পনার ত্রুটি। র‌্যাম্প থাকলে আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলে রোগীদের চাকা লাগানো বেড সমেত হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে আসা যায়। কিন্তু ঝাড়গ্রাম-সহ জেলার বিভিন্ন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে সেই ব্যবস্থাই নেই। অসুস্থ রোগীদের ট্রলিগুলি লিফটে করে তিন তলা ও চারতলার ওয়ার্ডগুলিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

সুপার স্পেশ্যালিটিতে স্মোক অ্যান্ড ফায়ার অ্যালার্ম আছে। গোটা ভবনে পাইপ লাইনের মাধ্যমে ওয়াটার স্প্রিঙ্কল্যার রয়েছে। এ ছাড়া আগুন নেভানোর গ্যাস সিলিন্ডারও আছে। রয়েছে ভূগর্ভস্থ জলের রিজার্ভার, হাইডান্ট। কিন্তু আগুন লাগলে তাত্ক্ষণিক কীভাবে রোগীদের ও নিজেদের সুরক্ষিত ভাবে বেরিয়ে আসতে হবে, সে ব্যাপারে কোনও অভিজ্ঞতা নেই নার্স ও কর্মীদের। কয়েক মাস আগে স্বাস্থ্য দফতরের এক প্রতিনিধি দল ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি ভবন পরিদর্শনে এসেছিলেন। ওই দলটির প্রতিনিধিরা অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার প্রয়োগবিধি দেখতে চান। কিন্তু কর্মীরা জানান, এ বিষয়ে তাঁদের কোনও প্রশিক্ষণ নেওয়া নেই।

Advertisement

সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালগুলিতে কেন্দ্রীয় ভাবে বাতানুকূল ব্যবস্থা রয়েছে। পুরো ভবনটিতে রয়েছে ফলস সিলিং। এক কথায় জতুগৃহ অবস্থা। চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, পরিকল্পনাতেই ত্রুটি রয়েছে। আগুন লাগলে মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনগুলিতে র‌্যাম্প না থাকায়, তিনতলা ও চার তলার ওয়ার্ডগুলি থেকে রোগীদের চটজলদি নামানো সম্ভব নয়। ঝাড়গ্রামে পাঁচতলায় রয়েছে অপারেশন থিয়েটর। আগুন লাগলে লিফট ব্যবহার করা বিপজ্জনক। সিঁড়ি দিয়ে অসুস্থ রোগীদের নামানো দুঃসাধ্য ব্যাপার। সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালগুলির এক তলায় ঢোকা ও বেরনোর চারটি মাত্র পথ আছে।

সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ভবনগুলিতে কারা অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার দেখভাল করবে সে বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। জঙ্গলমহলের চিকিৎসাধীন রোগীর পরিজন শ্যামল বাস্কে, শুকুরমণি হাঁসদা, জমাদার টুডুর কথায়, “আধুনিক চিকিৎসার নাম করে এ তো মৃত্যু ফাঁদ। এগরার ঘটনার পরে ভয় করছে।” ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের পুরনো ভবনে আবার অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থাই নেই। তবে পুরনো ভবনে সিঁড়ির পাশাপাশি, র‌্যাম্প আছে। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের পুরনো ভবনটিতে রয়েছে, প্রসূতি, শিশু ও আইসোলেশন ওয়ার্ড। এছাড়া রয়েছে এসএনসিইউ (নবজাতক অসুস্থ শিশুর শুশ্রূষা কেন্দ্র)।

ঝাড়গ্রাম মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি ও ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, “সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনে অগ্নি নির্বাপণের জন্য সব ধরনের স্বয়ংক্রিয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রয়েছে। শীঘ্রই জেলা হাসপাতাল ভবনেও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement