প্রতীকী ছবি
করোনা সতর্কতায় লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও ১ জুন থেকে রাজ্যের সব ধর্মস্থান খোলার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে প্রায় দু’ মাস ধরে বন্ধ থাকা মন্দির, মসজিদ, গির্জা খোলার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। তবে সোমবার থেকে এই সব ধর্মস্থানগুলি খোলা হবে কিনা তা নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন মন্দির ও মসজিদ কমিটি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
তমলুক শহরের বর্গভীমা, কাঁথির নাচিন্দা ও এগরা হটনাগর মন্দির পরিচালন কর্তৃপক্ষ মন্দির খোলা নিয়ে আলোচনার পরে আজ, সোমবার থেকে নাচিন্দা ও হটনাগর মন্দির খোলার সিদ্ধান্ত হলেও এখনও খুলছে না বর্গভীমা মন্দির। জেলার তথা রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছিল লকডাউনের সতর্কতা মেনে। রবিবার সন্ধ্যায় মন্দির পরিচালন কমিটি বৈঠকে বসে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আপাতত মন্দির ভক্ত ও দর্শনার্থীদের জন্য খোলা হবে না। বর্গভীমা মন্দির পরিচালন কমিটির সম্পাদক শিবাজী অধিকারী বলেন, ‘‘সরকারিভাবে মন্দির খোলার ঘোষণা সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি। তবে আমরা প্রশাসনের কাছে মন্দির খোলার নির্দেশিকা বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছি। তার পর কমিটিতে আলোচনা করে মন্দির খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আপাতত মন্দির খোলা হচ্ছে না।’’
রবিবার নাচিন্দা মন্দিরের পরিচালন কমিটির সভাপতি অনিল মান্না বলেন, ‘‘সোমবার থেকে মন্দিরের সব বিভাগ খোলা হবে। তবে আপাতত অন্নভোগ বিতরণ ব্যবস্থা চালু হচ্ছে না। তা চালু করা হবে আগামী ৮ জুন থেকে। মন্দিরে পুজো দেওয়া থেকে অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান সব কিছু হবে করোনা সতর্কতা বিধি মেনে।’’
এগরার হটনাগর মন্দির পরিচালন কমিটিও সোমবার থেকে ফের মন্দির খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হটনাগর মন্দিরের সেবাইত বোর্ডের তরফে সিদ্ধান্ত হয়েছে করোনা সতর্কতা বিধি মেনে সোমবার থেকে মন্দিরের মূল প্রবেশ পথ খোলা থাকবে ভক্তদের জন্য। মন্দিরে ভক্তরা পুজো দিতে পারবেন। তবে মন্দির চত্বরে এক সঙ্গে সর্বাধিক তিনজন থাকতে পারবেন। মন্দিরের গর্ভগৃহে একজন পুরোহিত থাকবেন। তবে চালের ভোগ শুধুমাত্র দেবতার জন্য তৈরি করা হবে। পুজো দেওয়া ছাড়াও সোমবার থেকে মন্দিরে বিয়ে দেওয়ার অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বর-কনে সহ চারজন মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। মন্দির সেবাইত বোর্ডের সম্পাদক স্বপন কর বলেন, ‘‘সোমবার থেকে মন্দির খোলা হচ্ছে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের জন্য। তবে মন্দিরে ভিতরে প্রবেশ হবে করোনার সব সতর্কতা বিধি মেনেই।’’
করোনা পরিস্থিতিতে মন্দিরের পাশাপাশি জেলায় রথযাত্রা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জেলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী মহিষাদলের রথযাত্রা। আহামী ১৮ দন রথযাত্রা উৎসব। কিন্তু এ বার মনো নমো করেই সারা হবে রথযাত্রা। রথ পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রাজপরিবার ও স্থানীয় রথ পরিচালনা কমিটি। মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তিলক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ঝড়ে রথের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। রবিবার রথের ঢাকনা খোলা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে কী ভাবে চালানো হবে তা নিয়ে জেলা শাসকের কাছে আমরা জানতে চেয়েছি। এই বিষয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। তবে মেলা, অনুষ্ঠান এ সব এবার বাতিল হচ্ছে। রাজবাড়ির সদস্য শৌর্য প্রসাদ গর্গ জানান, এবার রথযাত্রা সম্ভব নয়।
এগরা মহকুমার শ্রীপুর ও বাসুদেবপুর এবং পটাশপুরের টেপড়পাড়া রথযাত্রাও এ বার করোনার কারণে বন্ধ থাকবে। রথে উঠবেন না জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। মাসির বাড়ির গুন্ডিজা মন্দিরে ঠাকুরের সেবায়তরা রথের পরিবর্তে কোলে করে নিয়ে আসবেন তাঁদের। আটদিনের পরে ফের তাঁদের মূল মন্দিরে নিয়ে আসা হবে।