বিনপুরের আঁধারিয়া গ্রামে গরাম পুজো। নিজস্ব চিত্র
পয়লা মাঘ আখ্যান যাত্রায় মাতল জঙ্গলমহল। গ্রামে গ্রামে আপাতত গরাম পুজো, উৎসবের আবহ।
মাঘ মাসের প্রথম দিনটি জঙ্গলমহলের মূলবাসীদের কাছে কৃষি নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। মকর পরবের পর এই দিনটি বিশেষ আনন্দের দিন। এ দিন ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি, কাঁকড়াঝোর, বাঁশপাহাড়ি, শিলদা, ওড়গোন্দা, বিনপুর, কাঁকো, আঁধারিয়া, দহিজুড়ি, জামবনি, গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম, ঝাড়গ্রাম ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম ছাড়াও শহরের সাবিত্রী মন্দির মোড়, শ্মশান কালী মন্দির মোড়ে ‘গরাম পুজো’ বা গ্রাম দেবতার পুজো হয়। গরাম থানে এ দিন পোড়া মাটির হাতি ও ঘোড়ার ছলন মূর্তি দিয়ে গ্রাম দেবতার পুজো করা হয়।
প্রচলিত বিশ্বাস, এই বিশেষ দিনে গরাম ঠাকুরকে সন্তুষ্ট করলে সারা বছর তিনি গ্রাম ও গ্রামবাসীকে বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। পুজোর পর গরাম দেবতার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য গরাম থানে হাঁস, মুরগি, পায়রা, ছাগল ও শুয়োর বলি দেওয়া হয়। প্রতিটি গরাম থানের পুজোকে কেন্দ্র করে ছোট থেকে বড় নানা ধরনের মেলা বসে। এ ছাড়াও যে কোনও শুভ কাজের জন্য জঙ্গলমহলের মূলবাসীদের কাছে এই দিনটি খুবই প্রশস্ত। এই দিনটি জঙ্গলমহলের মূলবাসীদের কাছে আখ্যান যাত্রার দিন। এ দিন কৃষকরা কৃষি জমিতে তিনবার লাঙল চালিয়ে প্রতীকী কর্ষণ করেন। নতুন কৃষি বর্ষের সূচনায় এই জমি কর্ষণকে হালচার বলে। সাঁকরাইল ব্লকের আঙ্গারনালি গ্রামের বাসিন্দা ক্ষিতীশ মাহাতো বলেন, ‘‘আজকের পবিত্র দিনে তিনবার লাঙল চালালে আগামী দিনে ভাল ফসল হবে মনে করা হয়। প্রাচীন সংস্কার থেকে আমরা এ দিন জমিতে হালচার করেছি।’’ আখ্যান যাত্রা ও গরাম পুজোয় মেতেছে চন্দ্রকোনা রোড এবং গোয়ালতোড়ের অনেক এলাকাও। গোয়ালতোড়ের পিংবনির পাটাশোলে কুড়মি সেনার পক্ষ থেকে নববর্ষকে স্বাগত জানানো হয়। এ দিন চন্দ্রকোনা রোডের সারবেড়া সিদো-কানহো গাঁওতার উদ্যোগে নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। গোয়ালতোড়ে টুসু মেলায় যোগ দিয়ে টুসু গান করেন মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো।
গবেষকদের মতে, মাঘ মাসের প্রথম দিন মূলবাসীদের কাছে পবিত্র দিন। এ দিন সব গ্রামেই গ্রাম দেবতার পুজো সংগঠিত হয়। যাতে বছরের আগামী দিনগুলি গ্রামে মানুষজনদের সুখে-শান্তিতে কাটে। এ দিন বিভিন্ন গ্রামে মেলাও হয়। এই দিনটিকে আখ্যান পরব বলা হয়। এ ছাড়াও কনে দেখার পক্ষে দিনটি শুভ বলে মনে করেন মূলবাসীরা। তাই এ দিন অনেক তরুণীর হাত রাঙানো হয়। এ দিন বাড়িতে বাড়িতে মাংস পিঠে, লাউ পিঠে, মূলো পিঠে, সেদ্ধ পিঠে ও বিভিন্ন ধরনের ভাজা পিঠে হয়। প্রাক্তন বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো বলেন, ‘‘মাঘ মাসের এই প্রথম দিনটি মূলবাসীদের কাছে খুবই পবিত্র দিন। আগামী দিন যাতে সুখে-শান্তিতে কাটে সে জন্য সব গ্রামেই দেবতার পুজো হয়। কুড়মালি মতে আখ্যান যাত্রা বছরের প্রথম দিন।’’