উড়ান: মায়ের আশীর্বাদ। —নিজস্ব চিত্র।
বারো বছর আগে অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন বাবা। সেই ঘটনা ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল বছর সাতেকের সুপর্ণাকে। জেনেছিল দারিদ্রের লড়াই করেই তাকে এগোতে হবে। লড়াইয়ের সেই শুরু। যার ফলও মিলেছে। উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৪০ পেয়েছে ঘাটালের রথিপুর বরদা বাণীপিঠ হাইস্কুলের ছাত্রী সুপর্ণা ধন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক অলোক কুমার ভট্টাচার্য বলেন, “সুপর্ণা খুব ভাল ছাত্রী। ওর পড়াশোনার জন্য স্কুল থেকে বই দেওয়া হয়। পরীক্ষার ফি-ও ব্যবস্থা করা হয়। ও কথা রেখেছে।’’ আর মেয়ের সাফল্য কী বলছেন মা পূর্ণিমাদেবী!
জানালেন, স্বামী সুরজিৎবাবু বাসের কন্ডাক্টর ছিলেন। সামান্য বেতনে দুই মেয়ে ও দুই ছেলে, বৃদ্ধ মা ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন। শেষে দারিদ্রের কাছে হার মেনে বছর বারো আগে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তার পর থেকে তিনিই সংসারের হাল ধরেন। শুরু করেন আনাজ বিক্রি। তার সামান্য আয় আর এক বিঘার মতো জমিতেই চলে সংসার। মাখা গোঁজার ঠাঁই বলতে ত্রিপল ও অ্যাসবেস্টসের ছাউনির দেওয়া দুটি ঘর। কোনওরকমে বড় মেয়েকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়িয়ে বিয়ে দিয়েছেন। বললেন, ‘‘আমার কষ্ট দেখে সাহায্য করতে টিউশন পড়াত সুপর্ণা। চাই ও আরও বড় হোক।’’ কম্পিউটার নিয়ে পড়াশোনা করে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চান সুপর্ণা। যদিও তাঁর আক্ষেপ, ‘‘টাকার অভাবে হয়তো বাংলা বিষয় নিয়েই পড়তে হবে আমাকে।’’ সাধ্য না থাকলেও মেয়ের ইচ্ছা যাতে পূরণ হয় সেই প্রার্থনাই এখন করছেন পূর্ণিমাদেবী।