টার্কি খামার। নিজস্ব চিত্র
কব্জি ঢুবিয়ে পাঁঠার মাংস বা মুরগির নানা পদ— বর্ষশেষে রেস্তোরাঁর মেনুকার্ড খুলে প্রথমে এই খাদ্যগুলির দিকেই চোখ চলে যায় ভেতো বাঙালির। ওই তালিকায় নতুন সংযোজন হচ্ছে টার্কি!
হলদিয়া থেকে কলকাতায় বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ইতিমধ্যেই টার্কি রফতানি করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুষ্টিগুণে ভরপুর কড়কনাথ মুরগিও (কালো মুরগি) মিলবে কলকাতার নিউ মার্কেট সংলগ্ন নানা হোটেলে।
হলদিয়া ব্লকের মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা তপন সাঁতরা সম্প্রতি টার্কি এবং কড়কনাথ মুরগির খামার বানিয়েছেন। সেখান থেকে কলকাতা-সহ অন্য জেলাতেও তিনি টার্কি সরবরাহ করছেন। গ্রামের সাঁতরা পাড়ায় তপনের খামারে গিয়ে দেখা গেল, কয়েক হাজার চার্কি এবং কড়কনাথ মুরগি প্রতিপালন করা হচ্ছে সেখানে। তপন জানান, কয়েক বছর আগে তিনি টার্কি চাষ শুরু করেছিলেন। সাধারণত তিন দিনের টার্কি ছানার দাম গড়ে ১৫০ টাকা করে পড়ে। এ বছর একটি সংস্থার কাছ থেকে দু’হাজার টার্কির ছানা এনেছিলেন তিনি। সেগুলি মূলত অস্ত্রেলিয়ান ও আমেরিকান প্রজাতির।
এ বছর তাঁর প্রতিপালিত কয়েকশো টার্কি ও কড়কনাথ মুরগি রফতানি করেছেন ওড়িশা এবং কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকার টার্কি বাজারে। হলদিয়ার চিরঞ্জীবপুর বাজারেও তপন টার্কি বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, ওই বাজারে কাছেই রয়েছে হলদিয়া বন্দর। ভিন্ দেশি নাবিকদের মধ্যেও টার্কির চাহিদা রয়েছে। তপন বলেন, ‘‘এ বছর টার্কির চাহিদা রয়েছে। এর মাংস কিলোগ্রাম প্রতি ৩৫০ টাকা। পুরুষ টার্কির গড় ওজন হয় ১০ কিলোগ্রাম। মেয়ে টার্কির ওজন তুলনামূলক কম। আর টার্কির ডিমও আকারে বড়। প্রতিটি ডিমের দাম ২৫ টাকা।’’ তপন জানান, তিনি ৮০ হাজার টাকা দিয়ে একটি হ্যাচিং মেশিন কিনেছেন। সেই মেশিনে নিজেই এবার থেকে টার্কির ডিম ‘হ্যাচিং’ করবেন বলে পরিকল্পনা নিয়েছেন।
অন্য মুরগির সঙ্গেই টার্কির প্রতিপালন করা যায় বলে জানাচ্ছেন তপন। কোনও ঝামেলাও নেই। টার্কির প্রিয় খাদ্য ঘাস–পাতা। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই এঁরা শাকপাতা খেয়ে বেঁচে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভাল। টার্কি প্রতিপালনের সঙ্গে যুক্ত আর এক ব্যক্তি ছবিলাল সাঁতরা বলেন, ‘‘টার্কি বছরে গড়ে ৮০টি ডিম দেয়। কড়কনাথ দেয় ১৩০টি ডিম।’’
টার্কি প্রতিপালন যে লাভজনক এবং কম ঝুঁকির, তা জানাচ্ছেন স্থানীয় ব্লক প্রাণী সম্পদ আধিকারিক শান্তনু ঘোষাল। টার্কি পালন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘টার্কি এবং কড়কনাথের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল। তাই এই ধরনের চাষে ঝুঁকি কম।’’