West Bengal government

সরকারি মূল্যে ধান বেচতে আবেদন হচ্ছে অনলাইনেও

ঝাড়গ্রাম ব্লকের চন্দ্রী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতাপপুর গ্রামের চাষি গণেশ মাহাতো গত বছর ঝাড়গ্রাম কিসান মান্ডিতে সাতবার গিয়েও ফিরে এসেছিলেন। অভিযোগ, বারবার বিভিন্ন অজুহাত দেওয়া হয়েছে তাঁকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২২ ০৮:৪৪
Share:

ধান কিনতে অনলাইনে আবেদন। প্রতীকী চিত্র।

সরকারি মূল্যে ধান বিক্রির জন্য এতদিন সিপিএসিতে (স্থায়ী ধান্যক্রয় কেন্দ্র) গিয়ে তারিখ নিতে হত। অনেক সময়েই পারচেজ অফিসারদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ উঠত। চাষিরা অভিযোগ করতেন, তাঁরা বাধ্য হয়ে ফড়েদের ধান বিক্রি করেন। অভিযোগ এড়াতে নয়া উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। চাষিরা এখন সরকারি কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ধান বিক্রির জন্য আগে থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারছেন। নিজের পছন্দ মতো তারিখ নিতে পারছেন। সেই কাজ চলছেও। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, যাঁরা চাষবাসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত তাঁদের বেশিরভাগই অনলাইন ব্যবস্থা নিয়ে প্রায় কিছু জানেন না। চাষিদের অভিযোগ, সেই সুযোগে ফড়েরা বেশিরভাগ তারিখ আগেভাগে বুকিং করে রাখবে। তা শুরুও হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

জানা গিয়েছে, সংশ্লিষ্ট পোর্টালে গিয়ে ধাপে ধাপে আবেদন করলে, তার একমাসের মধ্যে ধান বিক্রি করার তারিখ পাবেন চাষিরা (ছুটির দিন ছাড়া)। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক চাষির দাবি, নতুন ব্যবস্থায় দুর্নীতি বেশি হবে অথচ সংশ্লিষ্ট সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে না। চাষিরা বঞ্চিতই থাকবেন। অভিযোগ, ধান কাটার আগে থেকেই ফড়েরা টাকা বিনিময়ে কার্ড ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর সংগ্রহ করতে শুরু করে দিয়েছেন। এক-একজন ফড়ের কাছে এখন ৩০০-৪০০ চাষির তথ্য রয়েছে। যা দিয়ে তারিখ বুকিং করা চলছে এখন।

ঝাড়গ্রাম ব্লকের চন্দ্রী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতাপপুর গ্রামের চাষি গণেশ মাহাতো গত বছর ঝাড়গ্রাম কিসান মান্ডিতে সাতবার গিয়েও ফিরে এসেছিলেন। অভিযোগ, বারবার বিভিন্ন অজুহাত দেওয়া হয়েছে তাঁকে। বাধ্য হয়ে ফড়ের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। এমন অভিযোগ আরও অনেকের। চাষিদের একাংশের ক্ষোভ, কিসান মান্ডিতে চাষিদের হয়রানি করা হলেও ফড়েরা সেখানে অনায়াসে ধান বিক্রি করেন। এবার ১ নভেম্বর থেকে খাতায় কলমে সরকারি ভাবে ধান কেনা শুরু হয়েছে। তবে জেলায় সরকারি ভাবে ধান কেনার পরিমাণ এখনও প্রায় শূন্য। অল ইন্ডিয়া কিসান খেতমজুর সংগঠনের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক অরুণ দাস বলছেন, ‘‘সরকারি ভাবে ধান বিক্রি করতে গিয়ে চাষিদের প্রচুর হয়রানি হত। বার বার গিয়েও ফিরে আসতে হত। হতাশ হয়ে ফড়েদের ধান বিক্রি করতে বাধ্য হতেন তাঁরা। এখন যদি চাষিরা নিজেদের পছন্দমত তারিখ নিতে পারেন তাহলে তো খুবই ভাল। তবে এতেও ফড়েরা ঢুকছে কি না, সেটা ধান কেনায় গতি এলে বোঝা যাবে।’’

Advertisement

ঝাড়গ্রাম জেলায় শহরের উপকন্ঠে কিসান মান্ডি, মানিকপাড়া পঞ্চায়েত অফিস, বিনপুর-১ কিসান মান্ডি, বেলপাহাড়ি কিসান মান্ডি ও কাঁকো গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস, নয়াগ্রাম ব্লকের কিসান মান্ডি, গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকে ছাতিনাশোল ব্লক অফিসের সামনে, গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের বাহারুনা ধান সংরক্ষন কেন্দ্র, সাঁকরাইলের রাঙাডিহা-সহ মোট ১১টি স্থায়ী ধান্যক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে সরকার কুইন্টাল প্রতি ধানের দাম ১০০ টাকা বাড়িয়েছে। ফলে এখন কুইন্টাল প্রতি ধানের সরকারি দাম ২০৪০ টাকা। স্থায়ী ধান্যক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে ধান বিক্রি করলে উৎসাহ ভাতা হিসেব কুইন্টাল প্রতি আরও ২০ টাকা বেশি পাওয়া যায়। খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, এক একটি কেন্দ্রে একদিনে ৭০ জন পর্যন্ত ধান বিক্রি করতে পারবেন। একজন চাষি প্রথম ধাপে সর্বাধিক ২৫ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে পারবেন।

জেলা খাদ্য নিয়ামক সুজয় দাস মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আগে পারচেজ অফিসাররা ধান কেনার জন্য তারিখ দিতেন। এবার চাষিরা অনলাইনের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের মত তারিখ নিতে পারবেন। তাই ধান বিক্রির জন্য তারিখ নেওয়ার হয়রানির অভিযোগের কোনও প্রশ্ন নেই।’’ তিনি জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট পোর্টালে এখনও পর্যন্ত ২১০০ জন বুকিং করেছেন। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৩৫ হাজার জন বুকিং করতে পারবেন। জুন মাস পর্যন্ত ধান কেনা চলবে। অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement