জলে ডুবেছে সব্জি খেত। কেশপুরের আকন্দিতে। ছবি: কিংশুক আইচ।
জলে ডুবেছে ধানের বীজতলা। যে সব চারা রোপণ করা হয়েছিল ডুবেছে তা-ও। নীচু জমিতে জল থাকায় সেখানে বন্ধ রোপণের কাজও। দ্রুত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এ বার ধান চাষে ক্ষতির আশঙ্কা প্রবল।
কৃষি দফতর অবশ্য অভয় দিচ্ছে। তাদের মতে, এখনই দুশ্চিন্তার খুব বেশি কারণ নেই। কারণ, সাধারণত ১৫ অগস্টের মধ্যে আমনের চারা রোপণের কথা বলা হলেও অগস্টের শেষ পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়া চলে। কিছু এলাকায় সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও চারা রোপণ করা হয়। তাতে উত্পাদনের খুব একটা হেরফের হয় না বলেই কৃষি দফতরের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেপুটি ডিরেক্টর নিমাইচন্দ্র রায়ের দাবি। তাঁর কথায়, “যদি জল নামতে আরও দেরি হয় বা পরবর্তীকালে ফের বৃষ্টিতে চাষজমি প্লাবিত হয় সে ক্ষেত্রে রোপণের সময় পিছিয়ে যাবে। তাই চাষিদের কম সময়ে ফলন হয় এমন ধান চাষ করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।’’
কৃষি দফতর জানিয়েছে, এই জেলার চাষিরা মূলত লালস্বর্ণ ধানের চাষ বেশি করেন। এই ধান পাকতে ১৩৫ দিন লাগে। পরিবর্তে আইইটি ৪৭৮৬, এমটিইউ ১০১০ চাষ করলে ভাল। ১০৫-১১০ দিনের মধ্যেই ধান হয়ে যাবে। তাই সরকারিভাবে এই ধীনের বীজ দেওয়া হচ্ছে বন্যা কবলিত এলাকায়। ১৫০ টন আইইটি ৪৭৮৬ ও ১৫০ টন এমটিইউ ১০১০ ধানের বীজ দিয়েছে সরকার। তার মধ্যে প্রায় ১৩৮ টন বীজ জেলায় এসে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্লকে পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ৭০ টন বীজ। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মাথাপিছু ১০ কেজি করে ওই বীজ দেওয়া হবে।
চলতি বছরে খরিফ মরসুমে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫ লক্ষ ৬১ হাজার হেক্টরে। তার মধ্যে ২ লক্ষ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে ইতিমধ্যেই রোপণের কাজ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক দুর্যোগে বেশিরভাগ জমি প্লাবিত হয়েছে। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, প্রায় ১ লক্ষ সাড়ে ৫২ হাজার হেক্টর চাষ জমি প্লাবিত। তার মধ্যে ৮৭৯০০ হেক্টরে চাষের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৭৯ কোটি ৩৭ লক্ষ। এই সময় মূলত ধান চাষ হয়। জেলায় ৪৩৪১৮ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছিল। তার মধ্যে সাড়ে ২৬ হাজার হেক্টর জমিই প্লাবিত। ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ হেক্টর ধানের। বেশি ক্ষতি হয়েছে আমনের। আমন ধানের বীজতলা তৈরি হয়েছিল ৫২৯৫ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার হেক্টর জমির বীজতলা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর আমন ধান রোপণ করা হয়েছিল ১ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর। তার মধ্যে সাড়ে ৭৮ হাজার হেক্টর প্লাবিত। ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪৩ হাজার হেক্টর আমন ধানের। এছাড়াও ক্ষতি হয়েছে ভুট্টা, কলাই, বাদাম, পাট ও আখের। ক্ষতি হয়েছে সব্জি ও ফুলেরও। প্রায় ১০৫০০ হেক্টর জমির সব্জি ও ৫০০ হেক্টর জমির ফুল ক্ষতিস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা!
কৃষি দফতরের মতে, যদি দ্রুত জল নেমে যায় ও ফের না বৃষ্টি হয় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কমতে পারে। কিন্তু যদি ফের বৃষ্টি আসে তখন কিন্তু বিপদ। নীচু জমিতে ধান চাষ করাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আর বীজতলার কারনে যদি উঁচু জমিতে চাষ করতেও দেরি হয় সেক্ষেত্রে উঁচু জমিতে ধানের পরিবর্তে অন্য চাষ করায় ভাল। কৃষি দফতরের পরামর্শ, যদি বন্যার কারনে ধান লাগাতে খুব দেরি হয়, তাহলে আরও কিছুটা পিছিয়ে অক্টোবর মাসে তরিয়া সরিষা চাষ ভাল। সরিষা তোলার পরে সে
জমি আলুও চাষ করা যাবে। কারণ, তরিয়া সরিষা ৭০-৭৫ দিনের চাষ। অবশ্য সব কিছুই নির্ভর করছে আবহাওয়ার উপরে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, সাধারণ নিয়মে ১৫ অগষ্টের মধ্যে ধান রোপণ করা হলে ভাল হয়, সেক্ষেত্রে অগস্ট মাস তো শুরু হয়ে গিয়েছে। কখন বীজতলা তৈরি করবেন আর কখন চাষ করবেন। কৃষি দফতরের তথ্য আধিকারিক দুলাল দাস অধিকারীর কথায়, “সাধারণ নিয়মে আমরা বীজতলা তৈরি করতে ২১ দিন সময় নিতে বলি। তারপর বীজতলা তুলে রোপণ করতে বলি। কিন্তু বর্তমানে যে তাপমাত্রা তাতে ১৫ দিনের বীজলতা রোপন করা যাবে। ফলে চলতি মাসের মধ্যেই
রোপণ করা সম্ভব।” তবে প্রকৃতি বিরূপ হলে ধান চাষে যে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা, তা উড়িয়ে দিচ্ছে না কৃষি দফতর।