অভিযোগ: বুলবুলে ক্ষতিপূরণের আবেদনের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে জমির জাল পরচা।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কৃষকদের ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা নেওয়া শুরু হয়েছে। জেলার প্রতিটি ব্লকে পঞ্চায়েত ভিত্তিক আবেদন জমা নেওয়া চলছে। কিন্তু সেই সব আবেদন পত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে বেশ কিছু ক্ষেত্রে আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া নথিতে জমির জাল পরচা ধরা পড়েছে বলে কৃষি দফতর সূত্রে খবর। যথারীতি ওই সব আবেদন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার পিছনে জাল পরচা তৈরির পিছনে বড় অপরাধ চক্র রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ভাবনা-চিন্তাও করছে তাঁরা।
নভেম্বরের ৯ ও ১০ তারিখ বুলবুলের জেরে ৩০১২টি মৌজাকে ক্ষতিগ্রস্ত ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। রাজ্য সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল থেকে ইতিমধ্যেই জেলার জন্য প্রায় ২০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তার জন্য চাষিদের কাছ থেকে আবেদন জমা নেওয়ার কাজও শুরু করেছে কৃষি দফতর। ব্লক কৃষি দফতরের অফিসে এব কোথাও কোথাও পঞ্চায়েত অফিসগুলিতে ক্যাম্প করে চলছে আবেদনপত্র দেওয়া ও জমা নেওয়ার কাজ। আবেদনের সঙ্গে কৃষকের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাস বইয়ের জেরক্স ও জমির সাম্প্রতিকতম পরচা বা রেকর্ড জমা দিতে হচ্ছে। যাঁদের সাম্প্রতিক পরচা নেই, তাঁদের পুরনো পরচার সঙ্গে কম্পিউটার আইডি নম্বর সংবলিত নথির প্রতিলিপি জমা দিতে হচ্ছে। আবেদন পাওয়ার পর আবেদনকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুঁটিয়ে দেখছেন ব্লক কৃষি কর্তারা। পরে আবেদনকারীর জমির বিবরণ ভূমি দফতরের নিজস্ব ওয়েবসাইটে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। আর এভাবেই জমির নথি যাচাই করতে গিয়ে বেশ কিছু জাল পরচা ধরা পড়েছে বলে দাবি কৃষি দফতরের আধিকারিকদের। কৃষি দফতর সূত্রে খবর জেলার নির্দিষ্ট একটি ব্লক থেকে এখনও পর্যন্ত দু’শোরও বেশি জাল পরচা ধরা পড়েছে। সে ক্ষেত্রে ওই আবেদনগুলি বাতিল করা হয়েছে।
কী ভাবে পরচা জাল করা হচ্ছে?
কৃষি দফতরের এক কর্তা জানান, নিজের নামে জমিই নেই এমন ব্যক্তি জাল পরচা দিয়ে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছেন এরকম সংখ্যাটাই বেশি। এত নিখুঁত ভাবে জমির পরচা নকল করা হয়েছে যে আবেদন জমা নেওয়ার সময় তা নকল বলে ধরা যায়নি। সেই সঙ্গে অনেকে আবার পরচায় জমির পরিমাণ বেশি দেখিয়ে নকল পরচা জমা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। বুলবুলের ক্ষতিপূরণের জন্য জল (যে জমিতে ধানচাষ হয়) ও কালাজমি (যে জমিতে আনাজ ও ফুল চাষ হয়) থাকা আবশ্যিক। বাস্তুজমির রেকর্ড বা পরচায় বাস্তুর জায়গায় ‘জলাজমি’ লিখে নকল পরচা তৈরির নমুনাও পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি কৃষি কর্তাদের। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাবার নামে জমির রেকর্ড থাকলেও ছেলে নিজের নামে তার নকল পরচা তৈরি করে আবেদনের সঙ্গে জমা দিয়েছে।
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, বিভিন্ন ব্লকে জমির রেকর্ড কৃষি দফতরের কম্পিউটারে রেকর্ড করে রাখা আছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে পুরনো সেই নথির সঙ্গে আবেদনের সঙ্গে জমি পড়া জমির নথির মিল না পাওয়াতেই জাল পরচার বিষয়টি ধরা পড়েছে। তাঁদের অভিযোগ, মূলত বিভিন্ন সাইবার কাফেতে এই ধরনের জল পরচা তৈরি হচ্ছে। জেলার মধ্যে এগরা মহকুমার পটাশপুর-২ ব্লকে এই ধরনের নকল পরচাযুক্ত আবেদন জমার অভিযোগ সবতেয়ে বেশি। ব্লকের সাউথ খণ্ড পঞ্চায়েত এলাকার আবেদনকারীদের থেকে এই ধরনের অভিযোগ এসেছে। এছাড়া আড়গোহাল, শ্রীরামপুর প্রভৃতি এলাকা থেকেও অনেক ভুয়ো আবেদন জমা পড়েছে। ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা সৌরভ মাইতি বলেন,‘‘আমরা প্রতিটি আবেদনপত্র দু’বার করে পরীক্ষা করেছি। ২ ডিসেম্বর থেকে আমাদের ব্লকে ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা নেওয়া শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত দু’শোর বেশি নকল পরচা ধরা পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ওই আবেদনপত্রগুলি বাতিল করা হয়েছে।”
তবে জেলার অন্যান্য ব্লক থেকেও পরচা নকলের অভিযোগ এসেছে বলে খবর। জেলার কৃষি দফতরে ডেপুটি ডিরেক্টর আশিস বেরা বলেন, ‘‘যে সব এলাকা থেকে নকল পরচা জমা দেওয়ার অভিযোগ এসেছে আমরা ইতিমধ্যে সে সব এলাকায় খোঁজ নিয়েছি। জানতে পেরেছি বেশ কিছু সাইবার কাফেতে জাল পরচা তৈরির কাজ চলছে। প্রয়োজনে ওই সমস্ত কাফের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’