প্রতীকী ছবি।
তৃতীয় বর্ষের পরিবেশ বিদ্যার পরীক্ষায় বাংলা ভাষায় প্রশ্ন না থাকায় বিভ্রান্তিতে পড়লেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একাধিক কলেজের পরীক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের সাম্মানিক এবং সাধারণ বিভাগের পরীক্ষার্থীদের পরিবেশবিদ্যা পরীক্ষা ছিল। ৭০ নম্বরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পুরোটাই ছিল ইংরেজিতে। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট এবং নির্ধারিত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন থেকে পরিবেশ বিদ্যার প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করার পরেই বিভ্রান্তিতে পড়েন পরীক্ষার্থীরা। রামনগর কলেজের তৃতীয় বর্ষের সাধারণ বিভাগের এক পরীক্ষার্থীর দাবি, ‘‘আগের সব কটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষায় ছাপা ছিল। ফলে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র বুঝে উত্তর দিতে সুবিধা হয়েছিল। এদিন শুধু ইংরেজিতে প্রশ্নপত্র দেওয়ায় উত্তর লিখতে সমস্যা হয়। শেষ পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় উত্তর লিখতে পেরেছি।’’
পরিবেশ বিদ্যার পরীক্ষায় ইংরেজিতে প্রশ্নপত্র পেয়ে এ দিন বিভ্রান্তিতে পড়েন দেশপ্রাণ মহাবিদ্যালয়, বাজকুল মিলনী কলেজ, হলদিয়া গভর্নমেন্ট কলেজ, নন্দীগ্রাম সীতানন্দ কলেজের মতো জেলার বেশ কয়েকটি কলেজের পরীক্ষার্থীরা। কোন ভাষায় উত্তর লিখতে হবে তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন বহু পরীক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, সাম্মানিক বিভাগে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইংরেজিতে ছাপা হলেও সাধারণ বিভাগের পড়ুয়াদের জন্য বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই প্রশ্নপত্র ছাপা হয়ে থাকে। এবছর জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও বাংলায় ছাপার দাবিতে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইদানীং বাংলা ভাষাকে জাতীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেও পরিবেশ বিজ্ঞান প্রশ্নপত্র শুধু ইংরেজিতে হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ এর সমালোচনা করে সমাজ মাধ্যমে সরব হয়েছেন।
এদিন পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা মেনে নিয়েছে জেলার একাধিক কলেজ কর্তৃপক্ষ। মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার মিশ্র বলেন, ‘‘উত্তর লেখার ক্ষেত্রে কোন ভাষা ব্যবহার করবেন তা জানার জন্য বেশ কয়েক জন পরীক্ষার্থী ফোন করেছিলেন। তাঁদের বাংলা ভাষায় উত্তর লেখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’’ তৃতীয় বর্ষের সাধারণ বিভাগের পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে পরিবেশ বিদ্যার প্রশ্নপত্র বাংলায় ছাপা হলে ভাল হত বলেই অধ্যক্ষদের দাবি।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অধ্যক্ষ সংগঠনের সম্পাদক অমিত কুমার দে বলেন, ‘‘প্রশ্নপত্র বাংলায় হলে ভাল হত। তবে ইংরেজিতে যে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে তাতে কলেজ পড়ুয়াদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’ এ ব্যাপারে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক দেবাশিস শর্মা বলেন, ‘‘পরিবেশ বিদ্যার প্রশ্নপত্রের ভাষা নিয়ে অহেতুক বিতর্ক হচ্ছে। যাঁরা এদিন ফোন করেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে বাংলা ভাষাতেই উত্তর লিখতে বলা হয়েছে। সেই মতো বাংলায় লেখা উত্তরপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের ড্যাশবোর্ডে জমা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সাম্মানিক বিভাগের পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র কেবল ইংরেজিতে ছাপা হয়েছে। সাধারণ বিভাগের পরীক্ষার্থীদের জন্য বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই প্রশ্নপত্র ছাপা হয়েছে।’’ যদিও এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে কেবল ইংরেজি প্রশ্নপত্রই পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
পরিবেশ বিদ্যার ইংরেজি প্রশ্নপত্র নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে এসইউসি-র ছাত্রসংগঠন ডিএসও। সংগঠনের জেলা সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘‘পরিবেশ বিদ্যার প্রশ্নপত্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলা এবং ইংরেজিতে হয়ে আসছে। এবার আচমকা শুধু ইংরেজিতেই প্রশ্নপত্র ছেপে পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা হয়েছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে বাংলাতেও প্রশ্নপত্র রাখা উচিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।’’