প্রতীকী ছবি।
তৃণমূলকে ছারখার করে দিয়েছেন দলেরই দুই বিধায়ক। দল ছাড়ার পরে এরকমই অভিযোগ করলেন তৃণমূলের কিসান খেতমজুর সেলের সদ্য প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুলাল মণ্ডল। শুক্রবার দল ছাড়লেন গড়বেতা ৩ অর্থাৎ চন্দ্রকোনা রোড পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আকাশদীপ সিংহও।
গোয়ালতোড়ের প্রবীণ নেতা দুলাল বৃহস্পতিবার পদ ও পার্টি দুই ছেড়েছেন। নানা মহলে জল্পনা, শনিবার তিনি শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগ গেরুয়া শিবিরে দিতে পারেন। তার ঠিক আগে তৃণমূলের প্রায় জন্মলগ্ন থেকে থাকা ওই নেতা তোপ দাগেন তৃণমূলের শালবনি ও গড়বেতার বিধায়কের বিরুদ্ধে। দুলালের অভিযোগ, ‘‘গোয়ালতোড় এলাকায় দলের বিধায়কেরাই দলকে ছারখার করে দিয়েছেন।’’
গোয়ালতোড় অর্থাৎ গড়বেতা ২ ব্লকের মোট ১০টি অঞ্চলের মধ্যে ৬টি আছে শালবনি বিধানসভার ও ৪টি গড়বেতা বিধানসভায়। ফলে শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো ও গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী দু’জনেই ওই ব্লকে তৃণমূলের সাংগঠনিক কাজ দেখেন। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই ব্লকে ভাল ফল করেছিল বিজেপি। গতবছর লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপির থেকে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। ওই ব্লকে দলের অভ্যন্তরীণ গোলমাল মেটাতে জেলা এমনকি রাজ্য নেতারাও হস্তক্ষেপ করেন। তবে কাজের কাজ হয়নি।
আগামী বিধানসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে গোয়ালতোড় ব্লকে ঘর গোছাতে শুরু করেছিল তৃণমূল। তারই মধ্যে শুভেন্দু অনুগামী বলে পরিচিত দুলালের দলত্যাগ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘শ্রীকান্ত মাহাতো ও আশিস চক্রবর্তী গড়বেতা ২ নম্বর ব্লককে যা খুশি করেছে। কর্মীদের মর্যাদা দেননি। তাঁদের যত রকমের হেনস্থা করতে হয় তাঁরা করেছেন। আমার উপরেও করেছেন।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দলটা করে এসেছেন তাঁদের মর্যাদা দেওয়া হয়নি। জেতা অঞ্চলের সভাপতিদের সরানো হয়েছে। হারা অঞ্চলের সভাপতিদের পদোন্নতি হয়েছে।’’ গড়বেতা ও গোয়ালতোড় কলেজে নিয়োগের ক্ষেত্রেও দলের এই দুই বিধায়ক অনিয়ম করেছেন বলে তাঁর অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট দুই বিধায়ক অবশ্য কোনও অভিযোগই মানেননি। গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘দল পরিচালনায় শীর্ষ নেতৃত্বের পরামর্শে ব্লকের সর্বস্তরে আলোচনা করেই সব কিছু হয়। তাছাড়া কোনও কাজে কোনও অনিয়ম হয়নি।’’ শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো বলেন, ‘‘কে কী অভিযোগ করল জানি না। আমরা ঠিক কী ভুল, সেটা ভবিষ্যতই বলবে।’’
শুক্রবার বিকেলে তৃণমূল ছাড়ার পরে চন্দ্রকোনা রোড পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আকাশদীপ বলেন, ‘‘তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদ ছেড়ে জেলা সভাপতিকে মেসেজ করেছি। শনিবার মেদিনীপুরে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছি।’’ তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গড়বেতা পূর্বে বিজেপির প্রার্থী ছিলাম। ২০০৫ সালে তৃণমূলে আসি।’’
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গড়বেতা ৩ পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন করেছিল তৃণমূল। সভাপতি হন আকাশদীপ। এ বার পঞ্চায়েত সমিতিতে কী হবে? আকাশদীপের উত্তর, ‘‘শুভেন্দুদার সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করব।’’ চন্দ্রকোনা রোডের দাদার অনুগামী বলে পরিচিত প্রণব ঘোষও এ দিন তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদ ছেড়েছেন। তিনি তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনেরও সদস্য ছিলেন। তৃণমূলের পদক্ষেপ কী হবে? গড়বেতা ৩ ব্লক সভাপতি রাজীব ঘোষ জানান, জেলা সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে উনি যা পরামর্শ দেবেন সেই মতোই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
শুক্রবার বিজেপির গোয়ালতোড় উত্তর ও দক্ষিণ মণ্ডলের উদ্যোগে অমিত শাহের সভার প্রস্তুতি মিছিল হয়েছে।