Maoist Leader

তৃণমূলের কর্মসূচিতে প্রাক্তন মাও-নেতা, কটাক্ষ

হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দা মধুসূদন। বাড়িতে উচ্চ শিক্ষিত ছেলে, মেয়ে রয়েছেন। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের সময় মধুসূদনের নাম প্রচারের আলোয় আসে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:২৯
Share:

অনুষ্ঠানে মধুসূদন মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

মাওবাদী কার্যকলাপ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন জঙ্গলমহলেরও অনেকে মাও-নেতা। পড়শি জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে অনেকে আবার শাসকদলের পদাধিকারী। জমি আন্দোলনের আঁতুড় ঘর নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে এই দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু এই জেলারই এক প্রাক্তন মাওবাদী নেতা মধুসূদন মণ্ডলকে দেখা গেল শাসকদলের মন্ত্রীদের সঙ্গে এক মঞ্চে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ করে গানও গাইলেন তিনি।

Advertisement

হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দা মধুসূদন। বাড়িতে উচ্চ শিক্ষিত ছেলে, মেয়ে রয়েছেন। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের সময় মধুসূদনের নাম প্রচারের আলোয় আসে। বিভিন্ন রকম নাশকতামূলক কার্যকলাপ ঘটানোর অভিযোগ উঠেছিল মধুসূদনের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনে মামলা রুজু করেছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট পরিচালিত রাজ্য সরকার। ২০০৯ সালে নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ার তৎকালীন গ্রাম প্রধান নিশিকান্ত মণ্ডল খুনের ঘটনাতেও নাম জড়ায় মধুসূদনের। এ বছর অক্টোবর মাসে সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে মধুসূদন-সহ আট জন অভিযুক্তকে ওই মামলায় বেকসুর খালাস বলে ঘোষণা করেছে হলদিয়া আদালত। তারপর সরাসরি রাজ্যের শাসকদলের হয়ে রাজনীতির ময়দানে অবতীর্ণ মধুসূদন। কয়েক মাস আগেই তাঁকে তৃণমূলের কিসান ও খেত মজুর সংগঠনের হলদিয়া শহর সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি, তৃণমূলের কিসান ও খেত মজুর সংগঠনের ব্যানারে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কর্মসূচি নেওয়া হয়। কাঁথি এবং হেঁড়িয়াতে দুটি পৃথক কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন মধুসূদন। সেই মঞ্চে ছিলেন রাজ্যের কারা দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী অখিল গিরি এবং রাজ্যের আরেক মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করে একাধিক গানও গিয়েছেন তিনি। আগামী ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামে শহিদ কর্মসূচিতেও মধুসূদনকে হাজির থাকতে বলেছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের একাংশ।

Advertisement

উল্লেখ্য, এর আগে গত বিধানসভা ভোটে রাজ্যের শাসকদলের সমর্থনে একাধিক প্রচার কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছে মধুসূদনকে। এদিন মধুসূদন দাবি করছেন, ‘‘নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মাওবাদীরা ছিল। তবে কোনও অপকর্ম করেনি। আমার বিরুদ্ধে যে সব মিথ্যা মামলা সে সময় করা হয়েছিল, সেগুলি থেকে মুক্তি পেয়েছি। শেষ বয়সে এসে আমি বুঝতে পেরেছি সমাজের পরিবর্তন করার জন্য রাজনীতির একটা প্ল্যাটফর্ম দরকার। বিজেপির মতো দলকে ঠেকানোর জন্য তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।’’

জেলারা প্রাক্তন মাও নেতার তৃণমূলে এ ভাবে সক্রিয় যোগ হওয়া নিয়ে রাজ্যের শাসক এবং বিরোধী দলগুলির মধ্যে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপির তমলুক সংগঠনিক জেলার অন্যতম সহ-সভাপতি তথা কাঁথি লোকসভার ইনচার্জ আনন্দময় অধিকারী বলছেন, ‘‘তৃণমূল আর মাওবাদী আসলে একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। নানা রকম দুর্নীতিতে জড়িয়ে যখন বেকায়দায় শাসক দল, তখন প্রশাসন এবং মাওবাদীদেরকে সামনের সারিতে নিয়ে এসে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতে চায় তৃণমূল।’’ একই অভিযোগ তুলেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের সম্পাদক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য হিমাংশু দাস বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে কেমিকাল হাব করতে চেয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু তৃণমূল আর মাওবাদীরা যৌথভাবে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে জমি অধিগ্রহণ করতে দেয়নি। সেটা যে কত বড় ভুল তা এখন পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষ হাড়েহাড়ে বুঝতে পেরেছেন। তবে আমরা বরাবরই বলে এসেছিলাম নন্দীগ্রামে তৃণমূল আর মাওবাদী একসঙ্গে যোগসাজশ রেখে নাশকতামূলক কার্যকলাপ ঘটিয়েছে। সে সময় মানুষ বা সংবাদমাধ্যম বুঝতে পারেনি।’’

যদিও বিরোধীদের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসক দল। এ প্রসঙ্গে কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বিধায়ক তরুণ মাইতি বলছেন, ‘‘রাজনীতিতে উনি হয়তো আগে মাওবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। তবে ওঁর বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছিল তার প্রত্যেকটিতে নির্দোষ বলে আদালত জানিয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কৃষকদের স্বার্থে আন্দোলন করতে চাইলে আপত্তি কোথায়!’’

বাসের ধাক্কায় আহত মা-ছেলে

দেগঙ্গা:‌ মোটর বাইকে বাসের ধাক্কায় আহত হলেন বাইক আরোহী মা ও ছেলে। মঙ্গলবার দুপুরে দেগঙ্গা থানার বেড়াচাঁপা বীণাপাণি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে টাকি রোডের ঘটনা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দুপুরে ছেলের বাইকে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধা মা। একই দিকে যাওয়া একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইকের পিছনে ধাক্কা মারে। দু’জনেই বাইক থেকে ছিটকে পড়েন। তাঁদের উদ্ধার করে বারাসতের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। পুলিশ বাস চালককে আটক করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement