বন্যায় সব থেকে বেশি ক্ষতি হয় বাঁধ ভাঙলে। হুড়মুড়িয়ে জল ঢুকে ভাসিয়ে দেয় ঘরবাড়ি, গবাদি পশু, পুকুরের মাছ, এমনকী মানুষও। ঠিকঠাক মেরামতির অভাবেই বেশিরভাগ বাঁধ ভাঙে। কোথাও আবার বাঁধের উপরেই হয়েছে মোরাম রাস্তা। ভারী যানবাহন যাতায়াতের দরুন সেখানে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। সেই গর্তে জল জমে চাপ তৈরি হয়। তাতে বাঁধে ধস নামে। অভিযোগ, এই ধরনের দুর্বল বাঁধ বর্ষার আগে মেরামত হয় না। নদীতে জল বাড়লে বালির বাঁধ দিয়ে, পাথর ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা হয় ঠিকই, কিন্তু তখন আর ঠেকানো যায় না বন্যা।
মজে যাওয়া খাল সংস্কার না করলেও নদী বাঁধ ভাঙার সম্ভাবনা বাড়ে। খাল মজলে নদীর জলধারণ ক্ষমতা কমে যায়। তখন বাঁধ উপচে জল বেরোয়। নদী সংস্কার হলে যে বন্যার প্রকোপ কমবে তা সবংয়ের কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদী সংস্কারের পরে সকলের কাছেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। তা-ও সংস্কারে এত উদাসীনতা কেন?
সেচ দফতরের সুপারিন্টিনেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অনীশ ঘোষ অবশ্য জানলেন, পূর্ব মেদিনীপুরে ৫৫ কিলোমিটার ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩৩ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত হয়েছে। এ ছাড়া পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর, ভগবানপুর-১, ২, দেশপ্রাণ, কাঁথি-২ ও কোলাঘাট ব্লকের মাসুরিয়া, নিমতল, মগরা খাল, তোপা খাল-সহ কয়েকটি খালের সংস্কার হয়েছে বলে তিনি জানান। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেলেঘাই ও কপালেশ্বরীর সংস্কার কাজও চলছে।
এ রকম কিছু কাজ হলেও বহু ক্ষেত্রে বাঁধকে স্থায়ী ভাবে মজবুত করার অনেক কাজ বাকি বলে সেচ দফতর সূত্রেই খবর। সমস্যা রয়েছে মেদিনীপুর সদর, খড়্গপুর-২, ডেবরা, গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকে। মেদিনীপুর পুরসভার ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের পালবাড়ি, আমতলা, গাঁধীঘাট, নজরগঞ্জের অবস্থাও এক। পালবাড়ির বাসিন্দা সঞ্জয় বর্মণের কথায়, “ভারী বৃষ্টি হলেই বাড়িতে জল ঢুকে যায়। নদী এগিয়ে আসছে।” নজরগঞ্জের সারদাপল্লির বাসিন্দা অনুপ দে, প্রদীপ পালও বলেন, “দ্রুত সংস্কার না হলে দু’চার বছরের মধ্যে বাড়িও চলে যাবে নদীগর্ভে।” ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৌমেন খানের ক্ষোভ, “ভাঙনের কথা বারবার সেচ দফতর ও জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু বাঁধ মেরামতির কোনও উদ্যোগ দেখছি না।” সুপারিন্টিনেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অনীশবাবু অবশ্য বলেন, “পুরসভা এলাকায় বাঁধ সংস্কারের জন্য প্রকল্প জমা দিয়েছি। টাকা পেলেই কাজ শুরু হবে।’’