—প্রতীকী চিত্র।
ঝাড়গ্রাম শহরে হাতির প্রবেশ আটকাতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে ব্যাটারি চালিত বিদ্যুতের বেড়া (ফেন্সিং) করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও শহরে হাতি ঢোকা বন্ধ হয়নি। অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ওই ফেন্সিং।
জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে গত দেড় মাসে হাতির হানায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। খাবারের সন্ধানে প্রতিদিনই ঘর-বাড়ি ভাঙছে হাতির দল। ক্ষতি করছে ফসলের। দিন কয়েক আগেই শহরের সারদাপীঠ কন্যাগুরুকুলে গেট ভেঙে ঢুকে পড়েছিল একটি হাতি। কন্যাগুরুকুলের মধ্যে রয়েছে মেয়েদের আশ্রম। সেদিন বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটতেই পারত। যদিও বন দফতরের তৎপরতায় ওই হাতিকে পরে জঙ্গলে পাঠানো হয়েছিল। তারপর ফের শহরের উপকন্ঠের একটি রিসর্টে ঢুকে গিয়েছিল হাতি। এই আবহে প্রশ্ন উঠছে, বিদ্যুৎবাহী ফেন্সিং বসিয়ে লাভ কি হল! বন দফতরের এক আধিকারিক মানছেন, বেড়া দিয়ে হাতি আটকানো খুবই মুশকিল। কারণ, চারদিকে তো ফেন্সিং করা সম্ভব নয়।
চলতি বছরে ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা নিয়ে পরে আলোচনা করতে হবে। যাতে তারা বন থেকে বেরোতে না পারে। বনে ফেন্সিংটা ভাল করে হয়। কয়েক বছর আগেও ঝাড়গ্রাম জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে হাতির উপদ্রব নিয়ে বন আধিকারিকদের ধমক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেবারই হাতি রুখতে পরিখা কাটা ও ফেন্সিং করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। সেটা বাস্তবায়িত হলেও সমস্যা মেটেনি। উল্টে বেড়েছে। কারণ, ঝাড়খণ্ড থেকে হাতির যাতায়াতের পথ বদলে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, এক বছর আগেও ঝাড়গ্রাম শহরে হাতি ঢুকে পড়েছিল। ওই ঘটনায় হাতির হানায় বেনাগেড়িয়া ও শহর লাগোয়া কন্যাডোবায় এক মহিলা-সহ চারজনের মৃত্যু হয়েছিল। তারপরেই হাতির প্রবেশ আটকাতে গত বছর ব্যাটারি চালিত বিদ্যুতের ফেন্সিং করা হয়েছিল। দুবরাজপুর থেকে শুরু করে কুটুমগেড়িয়া, উত্তর মুরাকাটি, বালিজুড়ি, কইমা, ফুলবেড়িয়া, ঘোড়াধরা এবং লালবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার বেড়া করা হয়েছিল। খরচ হয়েছিল ৪৫ লক্ষ টাকা। আবার কন্যাডোবা, শ্রীরামপুর শহরের প্রান্তে ৪ কিলোমিটার পরিখা খননের জন্য যার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ২৫ লক্ষ টাকা। কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল। কারণ, বিগত দিনেও ঝাড়গ্রাম ব্লকের আমলচটি, শিরষি গ্রামে ব্যাটারি চালিত বিদ্যুতের বেড়া হয়েছিল। বছর খানেক পরে তা নষ্ট হয়ে যায়। এবারও প্রায়
একই ছবি।
কেন এমন হচ্ছে? বন দফতরের এক আধিকরিক বলেন, ‘‘রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গাছের ডাল পড়ে দু’টি তার এক সঙ্গে লেগে গেলে শক-সার্কিট হয়ে যায়। তারপরে ওই ফেন্সিংয়ে আর কোনও শক লাগে না। দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে থাকায় অনেকে ফেন্সিংয়ের তারও খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। তাই নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষণ প্রয়োজন।’’ ঝাড়গ্রামের বন বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অনেক সময় গাছের ডাল পড়ে সাময়িক ভাবে ফেন্সিং নষ্ট হয়। দু’বছর রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা রয়েছে। তার যাতে চুরি করা না হয় সেজন্য আমরা সচেতন করছি।’’ তিনি জানাচ্ছেন, জঙ্গল থেকে হাতির যাতে না ঢোকে সেই জন্য বিদ্যুৎবাহী ফেন্সিং করা হয়েছিল। কিন্তু দলছুট হাতি বেশ কিছু সময় মেন রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে। সেটাও অন্যতম সমস্যা।