চোলাই রুখতে পডিহার পথে গোপমহলের প্রমীলারা

এই তো মাস খানেক আগের কথা। ভোর হলেই ঠেক খুলে চোলাই বিক্রি করতেন ঘাটালের গোপমহলের দুর্গা মালিক, করুণা মালিক, মিলি মণ্ডলরা। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। চোলাইয়ের ব্যবসা তুলে তাঁরাই কেউ মাছ, কেউ সব্জি বা ধূপ তৈরি করেই দিব্বি চালাচ্ছেন সংসার।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৫
Share:

প্রতিবাদে মহিলারা। নিজস্ব চিত্র।

এই তো মাস খানেক আগের কথা। ভোর হলেই ঠেক খুলে চোলাই বিক্রি করতেন ঘাটালের গোপমহলের দুর্গা মালিক, করুণা মালিক, মিলি মণ্ডলরা। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। চোলাইয়ের ব্যবসা তুলে তাঁরাই কেউ মাছ, কেউ সব্জি বা ধূপ তৈরি করেই দিব্বি চালাচ্ছেন সংসার। শুধু নিজেরাই নয়, গ্রাম থেকে চোলাই ব্যবসা তুলে দিতে তাঁরা নেমেছেন রাস্তাতেও। একসময় তাঁদের ব্যবসা বন্ধ করতে যাঁরা উদ্যোগী হয়েছিলেন সেই শিলা দোলই, মেঘবালা রায়েদের সঙ্গে নিয়েই শুরু হয়েছে আন্দোলন। আর ঘাটাল ও দাসপুর-২ ব্লকের গোপমহল বাজার সংলগ্ন ভিডিও হলের মোড়ে মঙ্গলবার সকাল থেকেই চলছে প্রমীলা বাহিনীর আন্দোলন।

Advertisement

বুধবার গোপমহল গ্রামে যেতেই দেখা গেল মহিলারা হাতে প্লাকার্ড নিয়ে অনশন মঞ্চে বসে রয়েছেন। এ দিন আন্দোলনের খবর পেয়েই গ্রামে যান আবগারি দফতরের আধিকারিকরা। আধিকারিকদের উদ্দেশে প্রমিলা বাহিনীর সদস্যদের চিৎকার করে বলতে শোনা গেল, “যতদিন না পযর্ন্ত মদ বিক্রি বন্ধ হচ্ছে-ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে। ধীরে ধীরে ঘাটাল মহকুমা সহ গোটা জেলাতেই আন্দোলন ছড়িয়ে দেব। অনেক হয়েছে। আর নয়। এ বার আপনারা ঠিকঠাক কাজ করুন।’’

স্থানীয় মহিলাদের অভিযোগ, আবগারি দফতর এবং পুলিশ-প্রশাসনের উদাসীনতায় চোলাইয়ের এত রমরমা। ঘাটালে ক্রমশই এই কারবার ফুলেফেঁপে আবার চোলাই মদের প্রতি আকৃষ্ট বাড়াতে মেশানো হচ্ছে নানা কীটনাশকও। ফলে অল্প বয়সেই কেউ হারাচ্ছেন চোখ। কেউ বা কিডনি ও ‌লিভারের সমস্যায় ভুগছেন। লাটে উঠছে সংসার।ন ষ্ট হচ্ছে এলাকার পরিবেশও। এতকিছুর পরেও হুঁস ফেরেনি প্রশাসনের।

Advertisement

লালগড়ের পডিহা গ্রামে একশো দিনের কাজে মন দিয়ে মদ বেচা ভুলে গিয়েছেন স্থানীয় মহিলারা। ঠিক পডিহা গ্রামের মতই গোপমহলেও শুরু হয়েছে আন্দোলন। এখানেও দুর্গা মালিকেরা পাশে পেয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েতকে। দুর্গাদেবী বলেন, “অভাব এবং পরিবেশের কারনেই মদ ব্যবসায় নামতে বাধ্য হয়। আমাদের যখন ব্যবসা বন্ধ হয়েছিল, তখন আমাদের খুব রাগ হয়েছিল। এখন বুঝছি ঠিকই হয়েছিল। মাছ বা সব্জি বিক্রি করে সুন্দর সংসার চালাচ্ছি। ভোল পাল্টে গিয়েছে পাড়ারও।’’

ঘাটাল ব্লকের স্থানীয় মনোহরপুর-২ পঞ্চায়েত প্রধান জয়দেব দোলই বলেন, “আমরা চাই গোটা গ্রামে এই অবৈধ কারবার বন্ধ হোক। মদ বিক্রি বন্ধ করার পর কেউ যদি আমাদের সাহায্য চান আমরা সাধ্যমতো তাঁদের পাশে থাকব।” আবগারি দফতরের জেলার এক পদস্থ কর্তা অশোক দের কথায়, “আমরা ধারাবাহিক ভাবেই অভিযান করি। এ বার প্রমীলা বাহিনীর সদস্যদের আমরা উৎসাহ দেব। তাঁদের নিয়ে বৈঠকও করা হবে।’’ ঘাটালের বিডিও সঞ্জয় পণ্ডিত বলেন, “এখন সরকারের নানা প্রকল্প চলছে। কাজের কোনও সমস্যা হবে না। আমিও ওই গ্রামে যাব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement